শীতে ত্বকের যত্নে ঘরোয়া উপায়

 শীতকালে ত্বকের যত্ন কিভাবে করবেন

আপনি নিশ্চয়ই লক্ষ্য করেছেন যে, ঋতু পরিবর্তনের সাথে সাথে আমাদের ত্বকের নানান ধরনের সমস্যা দেখা দেয়। বিশেষ করে শীতকালে সফট স্কিন অনেকটা রুক্ষ এবং শুষ্ক হয়ে যায়।

ঠান্ডা বাতাস, আর্দ্রতা কম, শুষ্ক আবহাওয়ায় ইত্যাদি কারণে আমাদের ত্বকের আদ্রতা নষ্ট হয়ে যায়। শীতকালে আমাদের ত্বকের উজ্জ্বলতা স্বাভাবিকের থেকে কম মনে হয়। ত্বক শুষ্ক হয়ে গেলে একটা কালচে ভাব চলে আসে।

আপনি চাইলে ঘরোয়া এবং প্রাকৃতিক ভাবে শীতকালে ত্বকের যত্ন নিতে পারেন। কিভাবে শীতকালে আপনার ত্বক মসৃণ এবং উজ্জ্বল রাখবেন সে বিষয়ে আলোচনা করব।

শুধুমাত্র আপনার মুখের ত্বক নয়, আপনার হাত-পা এবং অন্যান্য সংবেদনশিল অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের ত্বকও কিভাবে আপনি শীতকালে ভালো রাখতে পারেন সেই বিষয়ে বিস্তারিত তুলে ধরা হয়েছে।

শীতকালে ত্বকের যত্ন


শুষ্ক ত্বকের লক্ষণসমূহ

যদি আপনার ত্বক শুষ্ক হয়ে থাকে তাহলে আপনি কতগুলো লক্ষণ দেখার মাধ্যমে বুঝতে পারবেন। লক্ষণসমূহ নিচে তুলে ধরা হলো
  • লালচে ভাব হওয়া
  •  ত্বক ফেটে আঁশ এর মত হয়ে যাওয়া
  •  চুলকানি হওয়া
  •  খসখসে ভাব হওয়া
  •  ত্বক ফেটে যাওয়া
  •  কোন কিছু দিয়ে আঁচড় কাটলে সাদা দাগ হওয়া

   
যদি উপরোক্ত লক্ষণগুলো আপনার সাথে মিলে যায় তাহলে বুঝবেন আপনার ত্বক শুষ্ক হয়েছে। ত্বক শুষ্ক হলে আপনি অবশ্যই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন। শুষ্ক ত্বকে আর্দ্রতা ফিরিয়ে আনার জন্য আপনাকে প্রতিবেদনটি পড়তে হবে এবং প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে।

আরো পড়ুনঃ চুল পড়া বন্ধ করার উপায় ও ঔষধ


শীতকালে ত্বক শুষ্ক কীভাবে প্রতিরোধ করবেন

ত্বক সাধারণত শীতকালে শুষ্ক হয়ে থাকে। শীতকালে ত্বক শুষ্ক হওয়ার হাত থেকে বাঁচতে গেলে আপনাকে আপনার দৈনন্দিন জীবনে কিছু পরিবর্তন আনতে হবে। সঠিকভাবে ত্বকের যত্ন নিতে হবে। পর্যাপ্ত পরিমাণ মশ্চারাইজার ইউজ করতে হবে।

শীতকালে ত্বক শুষ্ক হওয়া কমাতে নিচের নিয়মগুলো অনুসরণ করুন

মশ্চারাইজার ব্যবহার করুন

যখন আপনি আপনার হাত মুখ বা শরীরের যে কোন অঙ্গ প্রত্যঙ্গ ধৌত করেন তখন প্রাকৃতিক ভাবে তৈরি হওয়া তৈলাক্ত ভাব নষ্ট হয়ে যায়। তাই যখন আপনি আপনার অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ ধৌত করবেন সাথে সাথে মশ্চারাইজার ব্যবহার করুন।
 
বিশেষ করে শীতকালে বেশি বেশি মসারাইজার ব্যবহার করা উচিত। এ সময় পরিবেশের আর্দ্রতা কম থাকে এবং সেইসাথে ত্বকের আর্দ্রতাও কম থাকে।

শুষ্ক ত্বকের জন্য বেশ কয়েকটি  কার্যকরী মশ্চারাইজার লোশন

CeraVe Moisturising Lotion
Nivea Soft Moisturizing Creme
POND'S Super Light Gel Face Moisturiser

ত্বকের মসরাইজার ভাব ধরে রাখতে আপনি এই ক্রিমগুলো ব্যবহার করতে পারেন। এই লোশন গুলো ব্যবহার করার মাধ্যমে আপনি ত্বকের আর্দ্রতা ধরে রাখতে পারবেন।

 

 আরো পড়ুনঃ অশ্বগন্ধার উপকারিতা ও ব্যবহার

 

প্রতিদিন সানস্ক্রিন ক্রিম লাগান

শীতকালের সানস্ক্রিন ক্রিম লাগানোর বিষয়টা অদ্ভুত লাগলেও ত্বক সুস্থ রাখতে এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সূর্যের ক্ষতিকর আল্ট্রাভায়োলেট রশ্মি ত্বকের জন্য খুবই মারাত্মক প্রভাব ফেলে।

সূর্যের আল্ট্রাভায়োলেট রশ্মি ত্বক আদ্র রাখতে বাধা দেয়।
আপনি মশরাজার ক্রিম ব্যবহার করার পর আপনার সেনসিটিভ ত্বকের সানস্ক্রিন এর একটি প্রলেপ লাগাতে পারেন।

 

শীতে ত্বকের যত্নে ঘরোয়া উপায়

 ঘরে বসেই শীতকালে আপনার ত্বকের যত্ন নেওয়ার জন্য নিম্নোক্ত উপায়গুলো অবলম্বন করুন

 

পেপে এবং মধুর মিশ্রণ ব্যবহার

মধু এবং পেঁপের মিশ্রণ ব্যবহার করার মাধ্যমে আপনার ত্বক সতেজ হবে এবং শুষ্ক ভাব দূর করবে। পাকা পেঁপেতে প্রচুর পরিমাণ অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে। অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট আপনার ত্বকে এন্টি এজিং হিসেবে কাজ করে। এবং মধুতে রয়েছে হিউমেক্ট্যান্ট যা আপনার ত্বক কোমল করতে সহায়তা করে।


কিভাবে মধু এবং পেঁপের মিশ্রণ তৈরি করবেন

  • প্রথমে একটি পাকা পেঁপে নিন
  • 2 টেবিল চামচ মধু নিন


পাকা পেঁপে ভালো করে ব্লেন্ড করে পেস্টের মতো তৈরি করুন। পেস্টটির সাথে মধু মিশিয়ে আঠালো ভাব তৈরি করুন।

এই পেস্টটি আপনার মুখ ঘাড় এবং আপনার শরীরের অন্যান্য শুষ্ক ত্বক যেখানে আছে সেই সমস্ত স্থানে লাগান। 20 মিনিটের জন্য এটি রেখে দিন এবং শুকিয়ে গেলে ধুয়ে ফেলুন।

ভালো ফলাফল পেতে আপনি সপ্তাহে 2 দিন ব্যবহার করতে পারেন।


আরো পড়ুনঃ মাথা ব্যাথার ঔষধের তালিকা


ত্বক ভালো রাখতে দুধ এবং বাদাম এর ব্যবহার

বাদামে রয়েছে বায়োঅ্যাকটিভ যৌগ যা আপনার ত্বকের আদ্রতা ধরে রাখতে সহায়তা করে। আপনার ত্বকে যদি আদ্রতা হীন হয়ে পড়ে তাহলে বাদাম এর ব্যবহার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

যদি আপনি বাদাম এবং দুধের ফেসপ্যাক ব্যবহার করেন তাহলে আপনার ত্বকের শুষ্কতা কমে যাবে এবং আপনার ত্বক আরও বেশি কোমল এবং মসৃণ হবে।

বাদাম এবং দুধের ফেসপ্যাক তৈরির প্রণালী

  • 1 থেকে 2 টেবিল চামচ বাদাম গুঁড়া নিন।
  • 2 থেকে 3 টেবিল চামচ খাঁটি দুধ নিন।


কিভাবে তৈরি করবেন

  • বাদামের গুঁড়া এবং দুধ একসাথে মিশিয়ে পেস্টের মতো তৈরি করুন।
  • আপনার যে সমস্ত স্থানের শুষ্ক ত্বকে রয়েছে সেখানে হালকাভাবে মালিশ করে লাগিয়ে দিন।
  • 10 মিনিটের জন্য রেখে দিন এবং শুকিয়ে গেলে ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।


যদি আপনি ভাল ফলাফল পেতে চান তাহলে সপ্তাহে 1 থেকে 2 বার করুন। ত্বক মসৃণ করার জন্য বাদাম এবং দুধের ফেসপ্যাক অত্যন্ত কার্যকরী ভূমিকা রাখে। আপনি নিঃসন্দেহে এটি ব্যবহার করতে পারেন।

 

 আরো পড়ুনঃ লম্বা হওয়ার বৈজ্ঞানিক উপায়

 

দই এবং মধুর প্যাক ব্যবহার করুন

দই আপনার ত্বককে ময়েশ্চারাইজ করবে। দই এর ভিতরে রয়েছে উপকারী ব্যাকটেরিয়া যেগুলো ত্বকের জন্য খুবই উপকারী। আর মধুতে রয়েছে এন্টিঅক্সিডেন্ট যেগুলো ত্বকের জন্য বেশ কার্যকরী ভূমিকা রাখে।

দই এবং মধুর প্যাক কিভাবে তৈরি করবেন

  • এক বাটি দই নিন।
  • এক টেবিল চামচ মধু নিন।


তৈরির প্রণালী

  • একটি পাত্র নিয়ে তাতে দই এবং মধু ঢেলে মিশিয়ে নিন
  • এই মিশ্রণটি আপনার ত্বকে ভালো করে মালিশ করে লাগান
  • 15 মিনিট রেখে দিন এবং ঠাণ্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।


ভালো ফলাফল পেতে সপ্তাহে এই প্যাকটি দুইবার লাগান।


আরো পড়ুনঃ ত্বক ফর্সা করার ঘরোয়া এবং প্রাকৃতিক উপায়

 

গ্লিসারিন ব্যবহার করুন

আপনার ত্বক যদি রুক্ষ এবং শুষ্ক হয়ে থাকে তাহলে আপনি গ্লিসারিন ব্যবহার করতে পারেন। রুক্ষ এবং শুষ্ক ত্বকের জন্য গ্লিসারিন অত্যন্ত কার্যকরী একটি উপাদান।

বাজার থেকে ভালো মানের গিলিসারিন কিনে নিয়ে এসে সামান্য পানি দিয়ে গুলিয়ে আপনার শরীরে ব্যবহার করতে পারেন। গ্লিসারিন ব্যবহার করলে ত্বকের ফাটা ভাব দূর হবে। গ্লিসারিন ত্বকের আদ্রতা ফিরিয়ে দেয় এবং ত্বক মসৃণ করে।


পেট্রোলিয়াম জেলি ব্যবহার করুন

পেট্রোলিয়াম জেলি চমৎকারভাবে ত্বকের আর্দ্রতা ধরে রাখে এবং ত্বককে ময়েশ্চারাইজ করে। শীতকালে প্রাকৃতিকভাবেই ত্বকের ময়েশ্চারাইজার কমে যায় পেট্রোলিয়াম জেলি ব্যবহার করলে ত্বকের আদ্রতা ভাবে ফিরে আসে।

কিভাবে ব্যবহার করবেন

  • 1 টেবিল-চামচ পেট্রোলিয়াম জেলি নিন
  • আপনার  ত্বকে ভালভাবে ম্যাসাজ করে লাগান
  • প্রতিদিন অন্তত একবার এটি প্রয়োগ করতে হবে

 

নারকেল তেল ব্যবহার করুন

নারকেল তেলের বায়োঅ্যাকটিভ উপাদানগুলি শুষ্ক ত্বকের জন্য উপকারী একটি প্রাকৃতিক নিরাময়। নারকেলের তেল ব্যবহার করলে এটি ত্বকের জন্য ময়েশ্চারাইজার হিসেবে কাজ করে এবং ত্বকের পৃষ্ঠ থেকে আর্দ্রতা হ্রাস রোধ করে।

আপনাকে যেটা করতে হবে

  • ঘানিতে ভাল নারকেল তেল নিয়েন
  • আপনার আলতোভাবে শুষ্ক এবং রুক্ষ ত্বকে আলতোভাবে লাগিয়ে ম্যাসাজ করুন।
  • এভাবে রেখে দিন।


ভালো কার্যকারিতা পাওয়ার জন্য সপ্তাহে তিন থেকে চারবার ব্যবহার করুন কার্যকারিতা

 

লেবু এবং মধু ব্যবহার করুন

লেবু অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ। মধু একটি চমৎকার ময়শ্চারাইজিং এজেন্ট হিসেবে কাজ করে। শীতকালে লেবু এবং মধু একসাথে ব্যবহার করলে ত্বকের শুষ্কতা এবং চুলকানি ভাব দূর হয়।

কিভাবে ব্যবহার করবেন

  •  ½ পাকা লেবু নিন
  •  2 টেবিল চামচ মধু নিন


 কিভাবে আপনি এটি ব্যবহার করবেন

  •  লেবুর রস বের করুন
  •  এতে মধু যোগ করুন
  •  আপনার আক্রান্ত ত্বকে ভালো করে লাগান


সপ্তাহে অন্তত দুইবার এটি করতে পারেন।


আরো পড়ুনঃ ব্রণ অথবা পিম্পল এর ঘরোয়া চিকিৎসা


সূর্যমুখী বীজ তেল

সূর্যমুখী বীজের তেল যুগ যুগ ধরে শুষ্ক ত্বকের প্রতিকার হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে।  সূর্যমুখী বীজ তেল আপনার ত্বকের আর্দ্রতা হ্রাস রোধ করতে সাহায্য করে।

কিভাবে ব্যবহার করবেন

  • সূর্যমুখী বীজ তেল কয়েক ফোঁটা নিন
  • আপনার হাতের তালুতে নিয়ে আপনার আক্রান্ত ত্বকে ভালভাবে মাসাজ করুন
  • এভাবে কিছুক্ষণ রেখে দিন যেন এটি আপনার শরীরে শুষে নিয়ে যায়
  • তারপর ধুয়ে ফেলুন


আপনি দিনে অন্তত একবার এটি করতে পারেন।

 

শেষ কথা

আশা করি পোস্টটি পড়ে আপনার ভালো লেগেছে। যদি পোস্টটি পড়ে আপনি বিন্দুমাত্র উপকৃত হয়ে থাকেন তাহলে অবশ্যই এটি আপনার বন্ধু বান্ধবের সাথে শেয়ার করবেন।


Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url