চুল পড়া বন্ধ করার উপায় ও ঔষধ - hair fall solution for all
চুল পড়া বন্ধ করার উপায়
চুল পড়ার কারণসমূহ
চুলপড়ার বেশ কয়েকটি কারণ রয়েছে। আপনি যদি চুল পড়ার কারণ গুলো আগে থেকেই বুঝতে পারেন তাহলে সহজেই আপনি আপনার চুল পড়া বন্ধ করতে পারবেন। উল্লেখযোগ্য কারণ গুলো নিচে তুলে ধরা হলো।
পুষ্টির অভাবে চুল পড়া
শরীরের পুষ্টির অভাব দেখা দিলে চুল পড়ে। প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদান যেমন আয়রন, জিংক, কপার প্রোটিন ইত্যাদির অভাব হলে চুল পড়তে পারে। এছাড়াও যদি শরীরে ভিটামিন ডি এর অভাব থাকে তাহলে চুল পড়ে।
শরীরে ভিটামিন ডি এর ঘাটতি পূরণের জন্য শরীরের রোদ লাগান।
হরমোনের ভারসাম্যহীনতা জনিত কারণে চুল পড়া
শরীরে যদি হরমোনের তারতম্য ঠিক না থাকে তাহলে চুল পড়তে পারে। সাধারণত মহিলাদের ক্ষেত্রে 30 বছর পর হরমোনের তারতম্য ঘটে থাকে।
সাধারণত 30 বছরের পর মহিলাদের শরীরে অত্যাধিক dihydrotestosterone (DHT) হরমোন রূপান্তর ঘটে থাকে। মহিলাদের শরীরের প্রধান হরমোন হল ইস্ট্রোজেন কিন্তু বয়সের সাথে সাথে এটি পরিবর্তিত হয় টেস্টোস্টেরন এবং অন্যান্য এন্ড্রোজেন বৃদ্ধি পেতে পারে।
এছাড়াও কিশোরী বয়সেও হরমোনের তারতম্য ঘটতে পারে।
থাইরয়েডের সমস্যার কারণেও চুল পড়ে
যদি কারো থাইরয়েড গ্রন্থির সমস্যা থাকে অথবা যদি অত্যাধিক বা অপর্যাপ্ত পরিমাণে থাইরয়েড হরমোন তৈরি হয় তাহলে এটি চুল পড়ার কারণ হতে পারে।
তবে, থাইরয়েড জনিত কারণে চুল পড়ে থাকলে শরীরে আরো অন্যান্য উপসর্গ থাকে যেমন ওজন বৃদ্ধি বা ক্ষতি, ঠান্ডা বা তাপের প্রতি সংবেদনশীলতা এবং হার্টের নানাবিধ সমস্যা ইত্যাদি।
জন্মনিয়ন্ত্রণ পিলের কারণে চুল পড়া
জন্মনিয়ন্ত্রণ বড়ি খেলে চুলের সমস্যা হতে পারে। পিলের মধ্যে থাকা হরমোন যেটা ডিম্বস্ফুটনকে ধ্বংস করে সেগুলো চুলপড়া ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখতে পার।
অনেক সময় দেখা যায় যদি কোন মহিলা দীর্ঘদিন ধরে পিল খাওয়ার পর যদি খাওয়া বন্ধ করে দেয় তাহলে তাদের চুল পড়া শুরু হয়।
আরো বেশ কয়েকটি ওষুধ আছে যেগুলো উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগ, বাত এবং বিষন্নতা দূর করার জন্য ব্যবহার করা হয় সেগুলোও চুলপড়া জন্য দায়ী।
মানসিক চাপের কারণে চুল পড়া
যদি অত্যাধিক মানসিক চাপে থাকা হয় তাহলে মাথা গরম হয়। মাথা গরম থাকলে সাধারণত চুল পড়ে থাকে। তাই যাদের চুল পড়ার সমস্যা আছে তাদের অবশ্যই মাথা ঠান্ডা রাখতে হবে। মানসিক চাপ কমিয়ে উৎফুল্ল মনে থাকলে চুল পড়া বন্ধ করা সম্ভব।
প্রসাধনী এবং যন্ত্রের ব্যবহার
হেয়ার স্টাইল করার জন্য আমরা সাধারণত বিভিন্ন ধরনের প্রসাধনী ব্যবহার করে থাকি। এসকল প্রসাধনী ব্যবহার করলে যদিও সাময়িকভাবে আমাদের চুল দেখতে ভালো দেখায় তবে দীর্ঘ মেয়াদী একটা ক্ষতি হয়ে যায়।
অনেক সময় আমরা বিভিন্ন রঞ্জক পদার্থ বা চুল সোজা করার জন্য হিট ব্যবহার করে থাকি এটি চুলের ব্যাপক ক্ষতিসাধন করে থাকে।
এছাড়াও আমরা যে শ্যাম্পু ব্যবহার করে থাকি তাতে সোডিয়াম লরিল সালফেট (SLS) থাকে যেটা আমাদের ইমিউন সিস্টেমের উপর একটি নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।
চুলে শ্যাম্পু করার প্রয়োজন তবে অতিরিক্ত শ্যাম্পু করলে উপকার এর পরিবর্তে ক্ষতিই বেশি হয়ে থাকে।
অতিরিক্ত ওষুধ ব্যবহার
আপনি যদি বিভিন্ন রোগের জন্য অতিরিক্ত মাত্রায় অ্যান্টিবায়োটিক বা অন্যান্য ওষুধ গ্রহণ করে থাকেন তাহলে আপনার শরীরে এক ধরনের বিরূপ প্রভাব তৈরি হবে। অতিরিক্ত ওষুধ গ্রহণ করলেও ওষুধের সাইড ইফেক্ট এর কারণে অনেক সময় মাথার চুল পড়ে।
চুল পড়া রোধে অতিরিক্ত ওষুধ খাওয়া বন্ধ করতে হবে। অতিরিক্ত ওষুধ ব্যবহার না করার মাধ্যমে আপনি চুল পড়া বন্ধ করতে পারেন।
চুল পড়া বন্ধ করার উপায়
এখানে আমি চুল পড়া বন্ধের বেশ কয়েকটি কার্যকরী উপায় উল্লেখ করেছি। আপনি যদি এই গুলো অবলম্বন করেন তাহলে আপনার চুল পড়া অনেকাংশে কমে যাবে।
শ্যাম্পুর ব্যবহার
সব ধরনের শ্যাম্পু সবার জন্য উপযুক্ত নয়। আপনাকে সঠিক শ্যাম্পু নির্বাচন করতে হবে। যে শ্যাম্পুতে ক্ষারের মাত্রা কম সেটি ব্যবহার করলে আপনার চুল পড়া কম হবে।
আপনার মাথার ত্বকের সাথে অ্যাডজাস্টেবল শ্যাম্পু আপনাকে বেছে নিতে হবে।
উদাহরণস্বরূপ আপনার মাথার ত্বক যদি শুষ্ক হয় তাহলে অতিরিক্ত শ্যাম্পু ব্যবহার করা যাবে না এবং তৈলাক্ত ত্বকের সপ্তাহে তিনবারের বেশি শ্যাম্পু করা যাবে না।
তাছাড়াও, আপনাকে আরও একটি বিষয় দেখতে হবে যে, আপনি যে শ্যাম্পু ব্যবহার করছেন তাতে যেন সালফেট, প্যারাবেন এবং সিলিকন সহ রাসায়নিক পদার্থ না থাকে।
কন্ডিশনার ব্যবহার
একটি ভালো কন্ডিশনার আপনার চুলের জন্য ম্যাজিকাল ভাবে কাজ করবে। চুল ভালো রাখার জন্য ভালো কন্ডিশনের বিকল্প নেই। কন্ডিশনার ব্যবহার করলে আপনার দুর্বল চুল সবল হয় এবং চুল পড়া বন্ধ হয়।
ডায়েট এবং ব্যায়াম করার মাধ্যমে চুল পড়া বন্ধ করুন
চুল পড়া বন্ধ করতে হলে আপনাকে পুষ্টিকর খাবার। আপনি যে খাবারগুলো খাবেন তাতে যেন প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন এবং আয়রন থাকে। এছাড়াও সুষম খাবার খাওয়ার সাথে সাথে আপনাকে নিয়মিত ব্যায়াম করতে হবে। আপনি চাইলে যোগব্যায়াম-ধ্যান ইত্যাদি করতে পারেন
আরো পড়ুনঃ ত্বক ফর্সা করার ঘরোয়া এবং প্রাকৃতিক উপায়
চুলে তেল দেওয়া
চুলে তেল দেওয়ার মাধ্যমে চুলে রক্ত সঞ্চালন চুলের শেকড়ে রক্ত সঞ্চালন হয়। আপনার মাথার ত্বকে মানানসই তেল ব্যবহার করতে হবে। মাথায় তেল দিয়ে স্ট্রেস মাসাজ করতে হবে। তেল দিলে চুল শক্ত এবং ঘন কালো হয়।
চুল স্টাইল করার প্রোডাক্ট ব্যবহার
চুলের স্টাইল করার প্রোডাক্ট ব্যবহার করার ক্ষেত্রে সর্তকতা অবলম্বন করতে হবে। আপনি যদি চুল পড়া বন্ধ করতে চান তাহলে অযথা চুলের স্টাইল করতে যাবেন না। ক্ষতিকারক রাসায়নিক যুক্ত কোন প্রোডাক্ট আপনি চুলে ব্যবহার করবেন না। যদি চলে একান্তই কোন কিছু ব্যবহার করতে হয় তাহলে অবশ্যই প্রাকৃতিক ভাবে তৈরি হয় এমন পণ্য ব্যবহার করবেন।
প্রাকৃতিক উপায়ে চুল পড়া বন্ধ করুন
চুল পড়া বন্ধ করার বেশ কয়েকটি প্রাকৃতিক উপায় রয়েছে। আপনার মাথায় যদি প্রচন্ড পরিমাণে চুল উঠে যায় তাহলে আপনি প্রাকৃতিক ভাবে আপনার চুল পড়া বন্ধ করতে পারবেন খুব সহজে। আমাদের দেশে নারী পুরুষ উভয়ের চুলপড়া সমস্যা রয়েছে। আপনি চাইলে প্রাকৃতিক বা ন্যাচারাল ভাবে চুল পড়া বন্ধ করতে পারেন। চুল পড়া বন্ধ করার প্রাকৃতিক উপায় গুলো নিচে তুলে ধরা হলো।
ডিমের মাস্ক ব্যবহার করার মাধ্যমে চুল পড়া বন্ধ করুন
ডিম ব্যবহার করার মাধ্যমে আপনি চুল পড়া বন্ধ করতে পারেন। ডিমের মধ্যে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ সালফার, ফসফরাস, সেলেনিয়াম, আয়োডিন, জিঙ্ক এবং প্রোটিন যা আপনার চুল পড়া রোধে কার্যকরী ভূমিকা পালন করবে।
ডিমের মাস্ক তৈরির প্রণালী
- এক চা চামচ অলিভ অয়েল এবং মধু ডিমের সাদা অংশের সঙ্গে ভালোভাবে মিশিয়ে নিন।
- উপাদান গুলো ভালভাবে মিশিয়ে পেস্টের মতো তৈরি করুন।
- চুলে ভালভাবে লাগিয়ে 20 মিনিট রেখে দিন।
- হালকা শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।
আরো পড়ুনঃ ব্রণ অথবা পিম্পল এর ঘরোয়া চিকিৎসা
চুল পড়া বন্ধে নারিকেলের দুধ
নারকেলের দুধে রয়েছে প্রোটিন এবং প্রয়োজনীয় চর্বি। নারকেলের দুধ ব্যবহার করার মাধ্যমে চুল পড়া বন্ধ করা যায়। আপনার যদি চুল পড়া সমস্যা থাকে তাহলে আপনিই নারকেলের দুধ ব্যবহার করার মাধ্যমে উক্ত সমস্যা থেকে সহজে মুক্তি পেতে পারবেন।
নারকেলের দুধ তৈরির প্রণালী
- একটি মাঝারি আকারে নারকেল নিন।
- নারকেলটি ভালোভাবে গ্রেট করুন।
- একটি প্যানে 5 মিনিটের জন্য সিদ্ধ করুন।
- ছেঁকে ঠান্ডা করুন।
- 1 টেবিল চামচ কালো মরিচ এবং মেথির বীজ নিন।
- উপাদান গুলো একসাথে মিশিয়ে নিন।
- মাথায় লাগিয়ে 20 মিনিট এর জন্য রেখে দিন।
- হালকা শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।
চুল পড়া বন্ধে গ্রিন টি
গ্রিন টি ব্যবহার করার মাধ্যমে চুল পড়া বন্ধ করা যায়। গ্রীন টি তে রয়েছে এন্টিঅক্সিডেন্ট। অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট চুল পড়া বন্ধে বেশ কার্যকরী ভূমিকা রাখে।
কিভাবে গ্রিন টি ব্যবহার করবেন।
- আপনার চুলের ঘনত্ব এবং লম্বার উপর নির্ভর করে এক কাপ গরম পানিতে দুই থেকে তিনটি টি-ব্যাগ ভিজিয়ে রাখুন।
- ঠান্ডা হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করুন।।
- আপনার মাথার ত্বক এবং চুলের ব্যবহার করুন।
- একঘন্টার জন্য রেখে দিন।
- ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।
আরো পড়ুনঃ লম্বা হওয়ার বৈজ্ঞানিক উপায়
চুল পড়া বন্ধে বিটরুট জুস
ভিটামিন সি এবং বি৬, ফোলেট, ম্যাঙ্গানিজ, বিটেইন এবং পটাসিয়াম সমৃদ্ধ বিটরুটের জুস আপনার চুল পড়া বন্ধে বেশ কার্যকরী ভূমিকা রাখবে।
বিটরুটের জুস ব্যবহার করার মাধ্যমে চুল পড়া বন্ধ করা যায়। আপনি চাইলে বিট্টুর ব্যবহার করার মাধ্যমে আপনার মাথার অতিরিক্ত চুল ঝরা বন্ধ করতে পারেন।
কিভাবে বিটরুটের জুস ব্যবহার করবেন
- সাত থেকে আটটি বিটরুট পাতা সিদ্ধ করুন।
- 5 থেকে 6 টি মেহেদি পাতা পিষে নিন।
- উপাদান দুইটি ভালোভাবে মিশিয়ে নিন।
- মিশ্রণটি আপনার মাথার ত্বকে লাগান।
- 15 থেকে 20 মিনিটের জন্য রেখে দিন।
- ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।
দই এবং মধুর ব্যবহার
দই এবং মধুর ব্যবহার চুল পড়া বন্ধ করার জন্য দই এবং মধুর মিশ্রন কার্যকরী ভূমিকা রাখ।
প্রস্তুত প্রণালী
- একটি পাত্র নিন।
- 2 টেবিল চামচ দই এবং 1 টেবিল চামচ মধু নিন।
- ভালোভাবে মিশিয়ে পেস্টের মতো তৈরি করুন।
- আধা ঘন্টার জন্য মাথায় ব্যবহার করে রেখে দিন।
- ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।
- সপ্তাহে অন্তত একবার এই মিশ্রণটি ব্যবহার করুন।
চুল পড়া বন্ধে অ্যালোভেরা
অ্যালোভেরা ব্যবহার করার মাধ্যমে মাথার চুল পড়া বন্ধ করা যায়। অ্যালোভেরা একটি ঘরোয়া এবং কার্যকরী ভেষজ। মাথায় যদিও চুলকানি অথবা ফুসকুড়ি থাকে অ্যালোভেরা ব্যবহার করার মাধ্যমে তা দূরীভূত হয়।
কিভাবে অ্যালোভেরা ব্যবহার করবেন।
- অ্যালোভেরার একটি রসালো পাতা নিন।
- জেল বের করুন।
- জেলটি আপনার চুল এবং মাথার ত্বকে লাগান।
- 45 মিনিটের জন্য রেখে দিন।
- ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।
- ভালো ফলাফল পেতে সপ্তাহে তিন থেকে চারবার ব্যবহার করুন।
আরো পড়ুনঃ মাথা ব্যাথার ঔষধের তালিকা
চুল পড়া বন্ধ করার জন্য মেথি বীজ
মেথি বীজ মেয়েদের চুল পড়া চুল পড়া বন্ধ করার জন্য বেশ কার্যকরী ভূমিকা রাখে।
কিভাবে মেথি বীজ ব্যবহার করবেন
- একমুঠো মেথি বীজ নিন।
- পর্যাপ্ত পানিতে সারারাত ভিজিয়ে রাখুন।
- নরম হয়ে গেলে এটি পিষে পেস্টের মতো তৈরি করুন।
- পেস্টটি আপনার মাথায় 30 মিনিটের জন্য লাগিয়ে রাখুন।
- ঠান্ডা জল দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।
- ভালো ফলাফল পেতে সপ্তাহে দুই থেকে তিনবার ব্যবহার করুন।
- টানা এক মাস ব্যবহার করলে কার্যকরী ফলাফল পাবেন।
আরো পড়ুনঃ অশ্বগন্ধার উপকারিতা ও ব্যবহার
শেষ কথা
আশা করছি এই পোস্টটি পড়ে আপনি উপকৃত হয়েছেন। যদি পোস্টটি আপনার ভালো লেগে থাকে তাহলে অবশ্যই সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করে আপনার বন্ধু-বান্ধবদেরকে পড়ার সুযোগ করে দেবেন।