ত্বক ফর্সা করার ঘরোয়া এবং প্রাকৃতিক উপায়

 ত্বক ফর্সা করার ঘরোয়া এবং প্রাকৃতিক উপায়

হ্যালো বন্ধুরা, আজকের এই টিউটোরিয়াল এর মাধ্যমে আমি আপনাদের সামনে নিয়ে হাজির হলাম কিভাবে আপনারা শ্যামলা ত্বক প্রাকৃতিক উপায়ে ফর্সা করতে পারবেন তার কিছু কার্যকরী ঘরোয়া এবং প্রাকৃতিক উপায় নিয়ে।


আমরা সবাই ফর্সা এবং নিখুঁত ত্বকের অধিকারী হইনা। আমাদের ত্বক স্বাভাবিকভাবেই মেলানিন নামক একটি রঞ্জক পদার্থ তৈরি করে, আমাদের ত্বকের রং মেলানিন এর উপস্থিতির দ্বারাই নির্ধারিত হয়। 


বাইরে তাপ, দূষণ এবং ব্যাকটেরিয়া মেলানিন এর সাথে যুক্ত হয়ে আপনার ত্বকে একটি তামাটে রং তৈরি করে।


তাছাড়া, যদি আপনার শরীর খুব বেশি পরিমাণ মেলানিন তৈরি করে তবে আপনার ত্বক কালো হয়ে যায়।



ত্বকে প্রাকৃতিক ভাবে তৈরি হওয়া মেলানিনের পরিমাণ পরিবর্তন করা যায় না। কিন্তু অতিরিক্ত সূর্যের রশ্মি এবং অন্যান্য মানসিক চাপের কারণে সৃষ্টি হওয়া তামাটে রং একই সাথে অতিরিক্ত নিম্নমানের প্রসাধনী ব্যবহারের ফলে সৃষ্টি হওয়া বিভিন্ন ধরনের দাগ খুব সহজেই প্রাকৃতিক ভাবে দূর করা যায়।


খুব সহজেই প্রাকৃতিকভাবেই ত্বকের রং ফর্সা করার বিভিন্ন উপায় রয়েছে। টিউটোরিয়ালটি মনোযোগ সহকারে পড়লে অবশ্যই আপনি প্রাকৃতিক ভাবে আপনার ত্বক উজ্জল করতে পারবেন


এই টিউটোরিয়াল এর মাধ্যমে আপনি ঘরোয়া উপায় আপনার ত্বকের উজ্জ্বলতা পুনরুজ্জীবিত করার প্রাকৃতিক কৌশল শিখতে পারবেন।


যদি আপনি আপনার ত্বকের রঙ সাদা, উজ্জ্বল এবং গোলাপি করতে চান তাহলে আপনার রান্না করে থাকা উপকরণ এর মাধ্যমেই তা সম্ভব। আপনাকে খুব বেশি খরচ করতে হবে না, আপনার বাড়িতে থাকা উপাদান গুলো দিয়েই আপনি আপনার ত্বক উজ্জল করতে পারবেন।


তাহলে চলুন শুরু করা যাক।


লেবুর রস, মধু এবং দুধের ব্যবহার

লেবুর রস, মধু এবং দুধ ব্যবহার করার মাধ্যমে আপনি আপনার ত্বকের রঙ ফর্সা করতে পারবেন। নিচের প্রক্রিয়াটি অনুসরণ করুন এবং ঘরে বসেই বানিয়ে ফেলুন আপনার ত্বক ফর্সা করার ঘরোয়া উপাদানটি।


প্রথমতঃ

দুধ ১ টেবিল চামচ

মধু ১ টেবিল চামচ

এবং লেবুর রস ১ টেবিল চামচ

একসাথে একটি বাটিতে নিয়ে ভালো করে মিশন।

দ্বিতীয়তঃ

মিশ্রণটি হালকাভাবে আপনার মুখের উপর ক্রিমের মতো লাগিয়ে নিন।

তৃতীয়তঃ

ক্রিমটি লাগিয়ে ২০ মিনিটের জন্য বসে থাকুন এবং শুকিয়ে গেলে উষ্ণ গরম পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।


উপকারিতাঃ

ত্বকের রং ফর্সা করার জন্য লেবুর রস, মধু এবং দুধের মিশ্রন অন্যতম সেরা ঘরোয়া রেমিডি

লেবুর রস এবং দুধের মিশ্রন আপনার ত্বকের তৈলাক্ত ভাব দূর করবে। এবং মধু আপনার ত্বকে অমৃতের মত কাজ করবে।

এই মিশ্রণটি অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল হিসেবে কাজ করে এবং আপনার ত্বকে যদি কোন অস্বাস্থ্যকর কোষ থেকে থাকে তাহলে সেগুলো দূর করার মাধ্যমে ত্বকের সতেজতা নিয়ে আসে এবং আপনার ত্বকে একটি স্বাস্থ্যকর আভা দেয়। এটি ব্যবহার করার মাধ্যমে ঘরোয়া উপায়ে আপনি ত্বক ফর্সা করতে পারবেন।



আলুর রসের মাধ্যমে ত্বকের রঙ ফর্সা করা

আলুর রস এর মাধ্যমে ত্বকের রঙ ফর্সা করা যায়। কিভাবে আপনি আলুর রসে মাধ্যমে ত্বকের রঙ ফর্সা করবেন তা নিচে তুলে ধরা হলো।


প্রথমতঃ

একটি আলু নিন এবং এর খোসা ছাড়িয়ে ছোট টুকরা করে নিন।

দ্বিতীয়তঃ

আপনার ত্বকের যেখানে ডার্ক স্পট আছে আলুর টুকরোগুলো সেখানে ভালো ভাবে ঘষুন।

এমনভাবেই ঘষবেন যেন ত্বকে আলুর রস ভালোভাবে লাগে।

তৃতীয়তঃ

আলুর রস লাগিয়ে ২০ মিনিটের জন্য রেখে দিন এবং শুকিয়ে গেলে হালকা গরম জল দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।


বিকল্প পদ্ধতিঃ

উপরের পদ্ধতির বিকল্প পদ্ধতি হচ্ছে, আপনি আলু ছোট ছোট টুকরা করে ব্লেন্ড করে ফেলুন। একটি সাদা কাপড় নিয়ে আলুর পেস্ট রেখে দিয়ে চাপ দিন দেখবেন রস বের হয়ে আসছে, এবার এই রস আপনি আপনার  নির্ধারিত স্থানে লাগান।


উপকারিতাঃ
আলু রসের কোন সাইড ইফেক্ট নেই, কোন প্রকার ক্ষতি ছাড়াই আলুর রস আপনার মুখের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করবে। আলুতে রয়েছে ভিটামিন সি এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যার কারণে এটি আপনার মুখের মৃত কোষ গুলো দূর করে নতুন কোষের সঞ্চার করে।

আপনি যদি প্রতিদিন আলুর রস বের করতে ঝামেলা বোধ করেন তাহলে আপনি একদিন বেশি করে আলুর রস বের করে ফ্রিজে রেখে দিতে পারেন। এটি আপনি চার সপ্তাহ পর্যন্ত রেখে ব্যবহার করতে পারবেন। এটি ত্বক ফর্সা করা অন্যতম একটি ঘরোয়া উপায়


পেপে এবং মধুর সংমিশ্রণ এর মাধ্যমে মুখের ত্বক উজ্জ্বল করুন 

পেঁপে এবং মধু দিয়ে ত্বকের রং উজ্জ্বল করা যায় কিভাবে আপনি মধু এবং পেঁপের মাধ্যমে ত্বকের রং উজ্জ্বল করবেন তা নিচে উল্লেখ করা হলো।


  1. আধা কাপ পরিপক্ক তাজা পেঁপে নিন এবং ব্লেন্ডারে দিয়ে পেস্টের মতো ব্লেন্ড করে নিন।
  2. তৈরিকৃত পেস্ট এর মধ্যে ১ চা চামচ মধু ভালোভাবে মিশিয়ে নিন।
  3. মিশ্রণটি আপনার মুখে লাগিয়ে ২০ মিনিটের জন্য রেখে দিন।
  4. উষ্ণ পানি দিয়ে আপনার মুখমণ্ডল ধুয়ে নিন।
  5. পরিষ্কার টাওয়েল দিয়ে আপনার মুখ মুছে ফেলুন।


উপকারিতাঃ
মধু এবং পেঁপের মিশ্রণ ত্বকের জন্য খুবই উপকারী। মধু এবং পেঁপের মিশ্রণের মাধ্যমে আপনি সহজেই আপনার ত্বকের রঙ ফর্সা করতে পারবেন। পেঁপেতে রয়েছে আলফা হাইড্রক্সি অ্যাসিড এবং পাপাইনের মতো এনজাইম যা ত্বকের মৃত কোষ দূর করতে এবং দাগ দূর করতে সাহায্য করে। এই কারণে আপনার ত্বক উজ্জ্বল হয়।

পেঁপেতে বিদ্যমান পেপেইন ত্বক সাদা করার বিশেষ এক ধরনের এনজাইম। তাই ত্বক ফর্সা করার ঘরোয়া উপায় হিসেবে আপনি পেঁপে এবং মধুর মিশ্রন ব্যবহার করতে পারেন।

দই এবং মধুর মিক্সচার

দই ব্যবহার করার মাধ্যমে ত্বকের কালচে রং দূর করে, ত্বক উজ্জ্বল করা যায়। আপনি যদি দই ব্যবহারের মাধ্যমে ত্বকের রঙ উজ্জ্বল করার প্রক্রিয়াটি না জেনে থাকেন, তাহলে নিচের নিয়মটি অনুসরন করুন।

  • ১ চা-চামচ মধু এবং ২ চা-চামচ সাধারণ দই একটি পাত্রে নিন।
  • উপাদান দুইটি ভালো করে মিশিয়ে পেস্টের মতো তৈরি করুন।
  • এই মিক্সারটি আপনার মুখে খুব সুন্দর ভাবে লাগিয়ে নিন এবং ১৫ মিনিটের জন্য রেখে দিন।
  • ঈষৎ উষ্ণ গরম পানি দিয়ে আপনার মুখ ভালো করে ধুয়ে ফেলুন।

উপকারিতাঃ
দই শুধু খাওয়ার জন্য সুস্বাদু নয়, এটি ত্বকের জন্য সেরা প্রসাধনীর মতো কাজ করে। দই-এ রয়েছে ল্যাকটিক অ্যাসিড যা আপনার মুখের রং গোলাপি করবে এবং সেইসাথে আপনার মুখে যদি বার্ধক্যের চিহ্ন থাকে তাহলে আপনার মুখের দাগ দূর করার মাধ্যমে মুখে সতেজতা নিয়ে আসবে।

এছাড়াও দইয়ে ভিটামিন বি কমপ্লেক্স রয়েছে যা আপনার ত্বককে আরও উজ্জ্বল করে তুলবে। প্রতিদিন যদি আপনি এই মিক্সারটি ব্যবহার করেন তাহলে আপনার ত্বকে একটি উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন দেখতে পাবেন। দই এবং মধুর মিক্সার এর মাধ্যমে আপনি ঘরে বসেই সহজে আপনার ত্বক সুন্দর ভাবে ফর্সা করতে পারবেন


চালের গুড়া এবং দুধের ব্যবহার

চালের গুঁড়া এবং দুধ ব্যবহার করার মাধ্যমে আপনি আপনার মুখের রং ফর্সা করতে পারবেন। মুখের রং ফর্সা করার জন্য চালের গুঁড়া এবং দুধ ব্যবহারের ফর্মুলা নিচে তুলে ধরা হলো।

আধাকাপ আতপ চালের গুঁড়া ভালোভাবে পিষে নিয়ে মিহিদানার মত তৈরী করুন।
৩ থেকে ৪ টেবিল-চামচ দুধ মিশিয়ে পেস্টের মতো তৈরি করুন।
আপনার সমস্ত মুখে এই পেস্ট সুন্দর মতো লাগিয়ে আধা ঘন্টার জন্য রেখে দিন।
ঈষৎ উষ্ণ গরম পানিতে আপনার মুখমণ্ডল ধুয়ে ফেলুন।

জিরা বীজ ব্যবহারের মাধ্যমে ত্বক ফর্সা করুন

একটি পাতিলে ২ কাপ পানি নিন
১ চা চামচ জিরা নিন
আধাঘণ্টা ধরে ভাল করে ফোটান
মিশ্রণটি ছেঁকে নিন 

এই পানি আপনি আপনার মুখে সুন্দরভাবে লাগিয়ে নিন।


 চন্দন এবং বাদাম গুঁড়া ব্যবহার করার মাধ্যমে ত্বক ফর্সা করুন

১ টেবিল-চামচ চন্দন এবং ১ টেবিল চামচ বাদাম গুঁড়া একসাথে মিশান
এতে কিছু পরিমাণ দুধ যোগ করুন এবং পেস্টের মতো তৈরি করুন
এবার এটি আপনার মুখে ২০ মিনিটের জন্য লাগিয়ে রাখুন
হালকা গরম পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন


উপকারিতাঃ

চন্দন কাঠের গুঁড়া দীর্ঘদিন ধরে ত্বক উজ্জ্বল করার জন্য ব্যবহার হয়ে আসছে। চন্দন কাঠে বিশেষ এক ধরনের পুষ্টিকর এবং বিস্ময়কর কিছু উপাদান রয়েছে। চন্দন কাঠ আপনার মুখের ফুসকুড়ি, তামাটে রং এবং মৃতকোষগুলো অপসারণ করার মাধ্যমে ত্বকের সতেজতা ফিরিয়ে নিয়ে আসবে। এটি কালো ত্বক ফর্সা করার উপায়


কি খেলে গায়ের রং ফর্সা হয়

প্রতিদিন অবশ্যই ভাত, রুট, ডাল, মাছ, মাংস খাবেন এবং বাধ্যতামূলক একটি ফল খেতে হবে

জাঙ্ক ফুড পরিহার করুন, এর পরিবর্তে প্রচুর পরিমাণ শাকসবজি খান। 
১. পালং শাক, 
২. টমেটো, 
৩. ব্রকলি, 
৪. মিষ্টি ‍আলু
৫. করলা, 
৬. গাজর,
৭. ফুলকপি ইত্যাদি।

দুগ্ধজাত খাবার যেমন:
১. দুধ, 
২. চিজ, 
৩. টক দই, 

আমিষ জাতীয় খাবার:
১. ডিম, 
২. মাছ, 
৩. মাংস 

ফলমূল জাতীয় খাবার:
১. আপেল, 
২. কমলা, 
৩. কলা, 
৪. পেঁপে, 
৫. আঙুর, 
৬. স্ট্রবেরি, 
৭. আম, 
৮. বরই 
৯. তরমুজ 
এছাড়াও সকল মৌসুমী ফল।

তাছাড়া, আপনি ডার্ক চকলেট খেতে পারেন, এটিও ত্বক ফর্সা করার ক্ষেত্রে কার্যকরী ভূমিকা রাখে।

কোন ভিটামিন ত্বক ফর্সা করে

ভিটামিন বি₁ (B₁), থিয়ামিন নামেও পরিচিত, ভিটামিন বি কমপ্লেক্স এর মধ্যে ভিটামিন B₁ ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। এবং রিবোফ্লাভিন, ভিটামিন B2 ত্বকের মসৃণতা আনতে সহায়তা করে। সহজ কথায় ভিটামিন বি কমপ্লেক্স গ্রহণ করলে ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়বে এবং ত্বক ফর্সা হবে
  • শস্য জাতীয় খাবার, 
  • কলিজা, 
  • দুধ, 
  • গাজর, 
  • টমেটো, 
  • সিম, 
  • মাছ-মাংসে 
ভিটামিন বি কমপ্লেক্স পাওয়া যায়।

ভিটামিন-সি গ্রহণ করলে আমাদের ত্বকের কোষ সজীব হয়। যদি কারো ত্বকে বার্ধক্যের ছাপ পড়ে তাহলে অবশ্যই তার ভিটামিন-সি গ্রহণ করা উচিত। 
ভিটামিন সি পাওয়া যায় এমন ফলমূল যেমন
  •  মাল্টা
  •  লেবু
  •  পেয়ারা
  •  আমলকি ইত্যাদি।
ভিটামিন-সি গ্রহণ করার মাধ্যমে ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করা যায়।

ভিটামিন এ (Vitamin A)
ত্বক রুক্ষ, খসখসে এবং শুষ্ক হলে ভিটামিন-এ গ্রহণ করা উচিত। যদি কেউ ব্রণ অথবা ছলি রোগে আক্রান্ত হয়ে থাকে তাহলে অবশ্যই তার বেশি বেশি ভিটামিন এ গ্রহণ করা উচিত।

যে সকল খাবারে ভিটামিন এ পাওয়া যায়
  • সবুজ শাকসবজি
  • হলুদ শাকসবজি 
  • ফলমূল 
  • ডিম
  • দুধ
  • কলিজা
ত্বকের যত্নে ভিটামিন এ খুবই গুরুত্বপূর্ণ, তাই আপনার খাদ্য তালিকায় ভিটামিন-এ রাখুন।


আশা করছি এই টিউটোরিয়ালটি পরে আপনার ভালো লেগেছে। 

যদি আরো কোন জিজ্ঞাসা থাকে তাহলে আপনি কমেন্ট বক্সে জানাতে পারেন। আমরা অবশ্যই আপনার প্রশ্নের উত্তর দেয়া সর্বাত্মক চেষ্টা করব।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url