অশ্বগন্ধার উপকারিতা ও ব্যবহার- Health Benefits of Ashwagandha
অশ্বগন্ধার উপকারিতা কি
Ashwagandha |
অশ্বগন্ধা বহু আগে থেকেই মানুষের বিভিন্ন রোগের ক্ষেত্রে ব্যবহার হয়ে আসছে। এটি একটি প্রাচীন ঔষধি গাছ।
অশ্বগন্ধা শরীর এবং মস্তিষ্কের বিভিন্ন সমস্যার জন্য ব্যবহার করা হয়।
অশ্বগন্ধা মস্তিষ্ক ঠান্ডা রাখে এবং এর কার্যকারিতা বাড়িয়ে দেয়। অশ্বগন্ধা রক্তের শর্করার মাত্রা কমিয়ে দেয় এবং কার্টিসেল হরমোন কমিয়ে, টেস্টোস্টেরন হরমোন বাড়িয়ে দেয়।
অশ্বগন্ধা বিষন্নতা দূর করার জন্য ব্যবহার করা হয়।
অশ্বগন্ধার উপকারিতা এবং এটি কিভাবে আপনি ব্যবহার করবেন তার বিস্তারিত বিষয় আজকের এই টিউটোরিয়াল এর মাধ্যমে আপনাদের সামনে তুলে ধরবো।
টিউটোরিয়ালটি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত মনোযোগ সহকারে পড়ুন।
অশ্বগন্ধা একটি প্রাচীন ঔষধি
আয়ুর্বেদ শাস্ত্রে অশ্বগন্ধা ব্যাপকভাবে ব্যবহার করা হয়। ভারতে বিভিন্ন প্রাকৃতিক চিকিৎসার মধ্যে অশ্বগন্ধা অন্যতম একটি।
অশ্বগন্ধা প্রায় তিন হাজার বছরেরও বেশি সময় থেকে মানসিক চাপ কমাতে, এনার্জি লেভেল বাড়াতে এবং মনোযোগ শক্তি (improve concentration) বৃদ্ধির জন্য ব্যবহার হয়ে আসছে।
অশ্ব শব্দের অর্থ ঘোড়া এবং গন্ধ শব্দের অর্থ ঘ্রাণ। অশ্বগন্ধা গাছে গোড়ার ঘ্রাণ পাওয়া যায়। অশ্বগন্ধায় ঘোড়ার গন্ধের জন্য এটিকে অশ্বগন্ধা নাম দেওয়া হয়েছে।
অশ্বগন্ধার বোটানিক্যাল নাম হল উইথানিয়া সোমনিফেরা। এটিকে ইন্ডিয়ান জিনসেং বলা হয়।
অশ্বগন্ধা গাছে হলুদ রঙের ফুল ফোটে। ইন্ডিয়া এবং উত্তর আফ্রিকার স্থানীয় এলাকায় এটি ব্যাপক ভাবে যায়।
অশ্বগন্ধার মূল বা পাতা থেকে নির্যাস বা গুঁড়া বিভিন্ন শারীরিক সমস্যার জন্য ব্যবহার করা হয়।
আরো পড়ুনঃ ত্বক ফর্সা করার ঘরোয়া এবং প্রাকৃতিক উপায়
অশ্বগন্ধা রক্তের শর্করার মাত্রা কমায়
বেশ কয়েকটি গবেষণায় দেখা গেছে যে, অশ্বগন্ধা গ্রহণকারী ব্যক্তিদের রক্তে শর্করার মাত্রা কমে যায়। যাদের রক্তে শর্করার মাত্রা বেশি আছে অশ্বগন্ধা তাদের জন্য একটি উপকারী ভেষজ।
এছাড়াও, আরও বেশ কয়েকটি গবেষণায় দেখা গেছে যে, এটি সুস্থ এবং ডায়াবেটিকস উভয় ধরনের লোকের শরীরের রক্তে শর্করার মাত্রা কমাতে পারে।
টাইপ টু ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য অশ্বগন্ধা বেশ উপকারী একটি ভেষজ।
অশ্বগন্ধা মানসিক দুশ্চিন্তা এবং উদ্বেগ দূর করে
অশ্বগন্ধা মানসিক চাপ এবং বিষন্নতা থেকে মুক্তি দেয়। অশ্বগন্ধা সবথেকে বেশি ব্যবহার করা হয় স্ট্রেস-রিলিভিং এর জন্য।
আপনি যদি বিষণ্নতা অথবা মানসিক চাপে ভুগে থাকেন তাহলে অশ্বগন্ধা আপনার জন্য পারফেক্ট একটি ভেষজ।
গবেষণায় প্রমাণিত যে, যারা মানসিক চাপে ভূগে থাকেন তারা অশ্বগন্ধা গ্রহণ করলে তাদের মানসিক চাপ ধীরে ধীরে কমে যায়।
আরো বেশ কয়েকটি গবেষণায় দেখা গেছে যে অশ্বগন্ধা ঘুমের জন্য খুবই উপকারী। যাদের অনিদ্রা সমস্যা আছে তারা অশ্বগন্ধা গ্রহণ করার মাধ্যমে একটি সুন্দর এবং মনোরম ঘুম উপভোগ করতে পারবেন।
ঘুম মানসিক দুশ্চিন্তা এবং উদ্বেগ কমাতে সাহায্য করে।
আরো পড়ুনঃ ব্রণ অথবা পিম্পল এর ঘরোয়া চিকিৎসা
অশ্বগন্ধা মাংসপেশি এবং শক্তি বাড়ায়
অশ্বগন্ধা মাংসপেশি এবং শক্তি বাড়াতে সাহায্য করে। অশ্বগন্ধা করটিসল হরমোন কমানোর মাধ্যমে টেস্টোস্টেরন হরমোন বাড়িয়ে দেয়। টেস্টোস্টেরন হরমোন মাংসপেশি বাড়াতে সাহায্য করে।
একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে, যারা অশ্বগন্ধা গ্রহণ করেন তাদের শারীরিক শক্তি বৃদ্ধি পেয়েছে। অন্য একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে, অশ্বগন্ধা গ্রহণ করা ব্যক্তিদের শরীরে চর্বির শতাংশ অনেকাংশে কমে যায়। অশ্বগন্ধা গ্রহণকারী ব্যক্তিদের শরীরে কোলেস্টেরলের মাত্রা হ্রাস পায় এবং পাশাপাশি তাদের পেশিশক্তি এবং মাংসপেশি বাড়তে দেখা গেছে।
অন্য একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে, যারা অশ্বগন্ধা গ্রহণ করেন তাদের রাত্রে ভালো ঘুম হয়।
পুরুষ অংশগ্রহণকারীদের শরীরে মাংসপেশির অনেক বেড়েছে বিশেষ করে বেঞ্চ প্রেস এবং লেগ এক্সটেনশন ব্যায়াম করলে তাদের বাহু এবং বুকের পেশির আকার অনেক বেড়েছে এবং সেইসাথে তাদের শরীরের চর্বি অনেকাংশে হ্রাস পেয়েছে।
অশ্বগন্ধা মহিলাদের যৌন জীবনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ
ক্লিনিক্যাল স্টাডি মাধ্যমে প্রমাণ করা হয়েছে যে, যেসব মহিলারা সেক্সুয়াল ডিস্ফাংশন এ ভুগে থাকেন অশ্বগন্ধা তাদের ক্ষেত্রে খুবই উপকার করে থাকে। অশ্বগন্ধা গ্রহণকারী মহিলাদের সেক্সুয়াল ফাংশনালিটি ভালো হয়।
অশ্বগন্ধা মহিলাদের উত্তেজনা, তৈলাক্ততা, অর্গাজম এবং পূর্ণাঙ্গ তৃপ্তির ক্ষেত্রে কার্যকরী ভূমিকা রাখে।
অশ্বগন্ধা গ্রহণকারী মহিলাদের যৌন জীবন অত্যন্ত আনন্দময় হয়ে থাকে এবং তাদের মানসিক দুশ্চিন্তা দূর করে।
অশ্বগন্ধা পুরুষদের ফার্টিলিটি এবং টেস্টোস্টেরনের মাত্রা বাড়ায়
অশ্বগন্ধা পুরুষদের যৌন জীবনের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি ভেষজ। অশ্বগন্ধা গ্রহণ করলে আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধি পায়।
অশ্বগন্ধা আমাদের মানসিক দুশ্চিন্তা দূর করে। অশ্বগন্ধা গ্রহণ করলে পুরুষের শরীরে টেস্টোস্টেরন হরমোনের মাত্রা বাড়ে।
অশ্বগন্ধা পুরুষদের শুক্রাণুর সংখ্যা বৃদ্ধি করে এবং সেইসাথে শুক্রাণুর স্বাস্থ্যও ভালো করে।
যে সকল পুরুষগণ ইনফার্টিলিটি সমস্যায় ভুগছেন আপনারা অবশ্যই টেস্টোস্টেরন হরমোন বাড়ানোর জন্য অশ্বগন্ধা গ্রহণ করবেন।
মানসিক দুশ্চিন্তা আমাদের যৌন জীবনে নেগেটিভ ভূমিকা পালন করে। আপনি যদি আপনার যৌন জীবন আনন্দময় করতে চান তাহলে অবশ্যই মানসিক দুশ্চিন্তা দূর করতে হবে আর এজন্য অশ্বগন্ধা আপনার মানসিক দুশ্চিন্তা দূর করার অন্যতম নিয়ামক।
নিয়মিত অশ্বগন্ধার গুড়া অথবা নির্যাস খান এবং আপনার টেস্টোস্টেরন হরমোন বাড়িয়ে নিন।
আরো পড়ুনঃ কেন পিরিয়ড বা মাসিক হয়?
অশ্বগন্ধা প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে।
বেশ কিছু প্রাণীর উপর গবেষণায় দেখা গেছে যে অশ্বগন্ধা ব্যবহার করলে প্রদাহ অনেকাংশে কমে যায়।যাদের শরীরে জ্বালা যন্ত্রণা আছে তারা চাইলে অশ্বগন্ধা ব্যবহার করতে পারেন।
অন্য আরেকটি গবেষণায় দেখা গেছে যে মানুষের উপর অশ্বগন্ধা প্রয়োগ করলে এটি কোষের গঠন উন্নত করে। ইমিউন সিস্টেম ভালো রাখে।
অশ্বগন্ধা কোষের বৃদ্ধি এবং নতুন কোষ গঠনের ক্ষেত্রে কার্যকরী ভূমিকা রাখে।
অশ্বগন্ধা নারী-পুরুষ উভয়ের জন্য খুবই উপকারী একটি ভেষজ। অশ্বগন্ধা ব্যবহার করলে প্রত্যেকেরই শরীরের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এর মাত্রা বৃদ্ধি পায়।
অশ্বগন্ধা ব্যবহার করলে সি-রিঅ্যাকটিভ প্রোটিন (CRP) এর মতো প্রদাহ হ্রাস হয় এবং হৃদরোগের ঝুঁকি কমে।
প্রদাহ কমাতে অশ্বগন্ধা বেশ কার্যকরী ভূমিকা রাখে।
অশ্বগন্ধা কোলেস্টেরলের মাত্রা কমাতে পারে
হার্ট ভালো রাখার জন্য শরীরে কোলেস্টেরলের মাত্রা কম রাখতে হয়। অশ্বগন্ধা শরীরে কোলেস্টেরল কমানোর জন্য কার্যকরী ভূমিকা রাখে।নিয়মিত অশ্বগন্ধা গ্রহণ করলে কোলেস্টেরল কমার পাশাপাশি ট্রাইগ্লিসারাইডের মাত্রাও নিয়ন্ত্রনে রাখে।
প্রাণীদের উপর গবেষণায় দেখা গেছে যে অশ্বগন্ধা গ্রহণ করলে রক্তে চর্বির মাত্রা কমে।
ডিপ্রেশন এবং রক্তে চর্বির মাত্রা কমানোর জন্য অশ্বগন্ধা কার্যকরী একটি ভেষজ।
তাই, ডিপ্রেশন এবং রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা কমানোর জন্য অবশ্যই নিয়মিত অশ্বগন্ধা গ্রহণ করুন।
আরো পড়ুনঃ লম্বা হওয়ার বৈজ্ঞানিক উপায়
অশ্বগন্ধা মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি করে
বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে যে যদি কেউ আঘাত জনিত কারণে স্মৃতিশক্তি এবং মস্তিষ্কের কার্যকারিতা হারায়, তাহলে অশ্বগন্ধা ব্যবহারের মাধ্যমে খুব দ্রুত সে সকল সমস্যার সমাধান হয়।গবেষণার মাধ্যমে আরও জানা গেছে যে অশ্বগন্ধার মধ্যে এন্টিঅক্সিডেন্ট এর উপস্থিতি থাকার কারণে এটি ক্ষতিকর ফ্রিরেডিকেল থেকে স্নায়ু কোষকে রক্ষা করে।
অশ্বগন্ধা একটি ঐতিহ্যবাহী স্মৃতি শক্তি বর্ধক ঔষধ হিসেবে ব্যবহার করা হয়। টেনশন এবং উদ্বিগ্নতা দূর করার জন্য অশ্বগন্ধা দীর্ঘদিন ধরে প্রাচীন ভারতবর্ষে ব্যবহার হয়ে আসছে।
তবে আজ যদি আপনি অশ্বগন্ধা গ্রহণ শুরু করেন তাহলে ফলাফল কালকে পাবেন এমনটা নয় দীর্ঘদিন ধরে ব্যবহারের ফলে আপনার কাঙ্খিত ফলাফলটি আপনি পেতে পারেন।
অশ্বগন্ধা মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি করে
বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে যে যদি কেউ আঘাত জনিত কারণে স্মৃতিশক্তি এবং মস্তিষ্কের কার্যকারিতা হারায়, তাহলে অশ্বগন্ধা ব্যবহারের মাধ্যমে খুব দ্রুত সে সকল সমস্যার সমাধান হয়।গবেষণার মাধ্যমে আরও জানা গেছে যে অশ্বগন্ধার মধ্যে এন্টিঅক্সিডেন্ট এর উপস্থিতি থাকার কারণে এটি ক্ষতিকর ফ্রিরেডিকেল থেকে স্নায়ু কোষকে রক্ষা করে।
অশ্বগন্ধা একটি ঐতিহ্যবাহী স্মৃতি শক্তি বর্ধক ঔষধ হিসেবে ব্যবহার করা হয়। টেনশন এবং উদ্বিগ্নতা দূর করার জন্য অশ্বগন্ধা দীর্ঘদিন ধরে প্রাচীন ভারতবর্ষে ব্যবহার হয়ে আসছে।
তবে আজ যদি আপনি অশ্বগন্ধা গ্রহণ শুরু করেন তাহলে ফলাফল কালকে পাবেন এমনটা নয় দীর্ঘদিন ধরে ব্যবহারের ফলে আপনার কাঙ্খিত ফলাফলটি আপনি পেতে পারেন।
অশ্বগন্ধা ব্যবহার অত্যন্ত নিরাপদ
অশ্বগন্ধা অত্যন্ত নিরাপদ একটি ভেষজ। অশ্বগন্ধা নিয়মিত সেবন করলে শরীরের বিভিন্ন সমস্যা দূর হয়।তবে অতিরিক্ত পরিমাণ অশ্বগন্ধা গ্রহণ করা উচিত নয়।
যাইহোক, গর্ভবতী এবং বুকের দুধ খাওয়ানো মহিলাদের ক্ষেত্রে অশ্বগন্ধা গ্রহণের ক্ষেত্রে সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে।
তাই বিভিন্ন রোগের ক্ষেত্রে অশ্বগন্ধার ব্যবহার করবেন তবে সাবধানতা সাথে।
এছাড়াও যারা থাইরয়েড রোগের জন্য ওষুধ খাচ্ছেন তাদের ক্ষেত্রেও অশ্বগন্ধা ব্যবহার করার ক্ষেত্রে সাবধানতা অবলম্বন করা উচিত। কারণ এটি কিছু কিছু লোকের ক্ষেত্রে থাইরয়েড হরমোনের মাত্রা বাড়িয়ে দিতে পারে।
আরো পড়ুনঃ মাথা ব্যাথার ঔষধের তালিকা
পরিশেষে
আজকের এই টিউটোরিয়াল এর মাধ্যমে আপনি অশ্বগন্ধার ব্যবহার এবং উপকারিতা সম্পর্কে জানতে পারলেন।যদি টিউটোরিয়ালটি আপনার ভালো লেগে থাকে তাহলে অবশ্যই এটি আপনার বন্ধু বান্ধবের সাথে শেয়ার করবেন। ধন্যবাদ।