ওয়্যারলেস কমিউনিকেশন সিস্টেম Wireless Communication System

Wireless Communication System
Wireless Communication System 

দুই বা ততােধিক ডিভাইসের মধ্যে ক্যাবল সংযােগ ছাড়া ডেটা কমিউনিকেশনের পদ্ধতি হলাে ওয়্যারলেস কমিউনিকেশন তারবিহীন মাধ্যমের সাহায্যে ওয়্যারলেস ডিভাইসমূহের মধ্যে যে পদ্ধতিতে কমিউনিকেশন হয় তাকে ওয়্যারলে কমিউনিকেশন সিস্টেম বলে। 
ওয়্যারলেস কমিউনিকেশন সংযােগকারী ডিভাইসগুলাের মধ্যকার দূরত্ব টেলিভিশন রিমােট কন্ট্রোলের ন্যায় কয়েক মিটার হতে পারে। আবার দীর্ঘ ও শক্তিশালী রেডিও কমিউনিকেশনের ক্ষেত্রে এ দূরত্ব কয়েক হাজার মিলিয়ন কিলােমিটার পর্যন্ত হয়ে থাকে। ওয়্যারলেস কমিউনিকেশনে কোনাে ধরনের ক্যাবলের প্রয়ােজন হয় না। 
টেলিকমিউনিকেশনসহ বিভিন্ন সংস্থার ক্যাবল নেটওয়ার্ক স্থাপনে অনেক ক্যাবলের প্রয়ােজন হয় এবং ক্যাবলগুলাে বিভিন্ন দূরত্বে কম্পিউটারের সাথে সংযােগ দেওয়ার ফলে অনেক খরচ পড়ে। কিন্তু ওয়্যারলেস কমিউনিকেশনে প্রেরক যন্ত্রে বেতার তরঙ্গের মাধ্যমে এক কম্পিউটারের সাথে অন্য কম্পিউটার বা এক ডিভাইসের সাথে অন্য ডিভাইসের সংযােগ স্থাপন করা হয়। 
আধুনিক অফিসগুলােতে আজকাল ওয়্যারলেস রাউটার ব্যবহার করে কতকগুলাে কম্পিউটারের মধ্যে ওয়্যারলেস কমিউনিকেশন সিস্টেমের ব্যবস্থা করা হয়। এতে বাড়তি কোনাে তারের ঝামেলা থাকে না। ওয়্যারলেস কমিউনিকেশন সিস্টেমের মাধ্যম হিসেবে রেডিও ফ্রিকোয়েন্সি কমিউনিকেশন, মাইক্রোওয়েভ কমিউনিকেশন, ইনফ্রারেড কমিউনিকেশন ব্যবহৃত হয়। 
স্মার্টফোন, পিডিএ, ট্যাব, ল্যাপটপ, হাই স্পিড ইন্টারনেট সংযােগে ওয়্যারলেস কমিউনিকেশন সিস্টেম অগ্রণী ভূমিকা পালন করছে। দূরত্বের উপর ভিত্তি করে ওয়্যারলেস কমিউনিকেশন সিস্টেম চার প্রকারের হয়ে থাকে। 
যথা
১. ওয়্যারলেস প্যান (Wireless PAN)। 
২. ওয়্যারলেস ল্যান (Wireless LAN) 
৩. ওয়্যারলেস ম্যান (Wireless MAN) 
৪. ওয়্যারলেস ওয়ান (Wireless WAN) 

ওয়্যারলেস প্যান (Wireless PAN) : ক্ষুদ্র দূরত্বে পার্সোনাল ডিভাইসগুলাের মধ্যে তথ্য আদান-প্রদানের জন্য তারবিহীন। যোগাযােগ করার পদ্ধতিকে ওয়্যারলেস প্যান বা WPAN বলে। ব্লু-টুথ ও ইনফ্রারেডের মাধ্যমে মােবাইল ফোন, পিডিএ, ল্যাপটপ, মাউস, প্রজেক্টরের মধ্যে যােগাযােগের পদ্ধতি হলাে WPAN। 10 মিটারের মধ্যে দূরত্বসীমায় WPAN কার্যকরী।

ওয়্যারলেস ল্যান (Wireless LAN) : একটি নির্দিষ্ট বিল্ডিং বা কলেজের ভবনগুলাের মধ্যে দুই বা ততােধিক ডিভাইসের মধ্যে স্থাপিত নেটওয়ার্ক ব্যবস্থাকে ওয়্যারলেস ল্যান বা WLAN বলে। WLAN পদ্ধতিতে প্রতিটি কম্পিউটারের সাথে একটি রেডিও মডেম এবং অ্যান্টেনা থাকে। যার সাহায্যে প্রতিটি কম্পিউটার অন্য কম্পিউটারের সাথে যোগাযোগ স্থাপন। করতে পারে। WLAN সংযােগের জন্য সংযােগকারী ডিভাইসের মধ্যে Wi-Fi প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়। বর্তমানে ছােট প্রতিষ্ঠান এবং বাসায় ওয়্যারলেস ল্যান অত্যন্ত জনপ্রিয়। 100 মিটারের মধ্যে দূরত্বসীমায় WLAN কার্যকরী। 

ওয়্যারলেস ম্যান (Wireless MAN) : একটি শহর এলাকার বিভিন্ন আইসিটি ডিভাইসের মধ্যে তারবিহীন যােগাযােগ স্থাপন করা হলে তাকে ওয়্যারলেস ম্যান বা WMAN বলে। কয়েকটি Wireless LAN মিলে একটি Wireless MAN গঠিত হয়। এক্ষেত্রে Wi-MAX.প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়। 5 কিলােমিটার দূরত্বের মধ্যে WMAN নেটওয়ার্ক কার্যকরী। 

ওয়্যারলেস ওয়ান (Wireless WAN) : সাধারণত অনেকগুলাে শহর এলাকার বিভিন্ন আইসিটি ডিভাইসের জন্যে তারবিহীন হয় না। যােগাযােগ স্থাপন করা হলে তাকে ওয়ারলেস ওয়াল বা WwAN বলে। বিস্তৃত ভৌগােলিক এলাকায় অবস্থিত একাধিক WLAN 1 বিজি ও WMAN কে নিয়ে Wireless WAN গড়ে ওঠে। Wireless WAN এ বিশেষ ডিভাইস ও প্রযুক্তির সাথে ইন্টারনেট । সংযােগের মাধ্যমে তথ্য আদান-প্রদানের কাজ সম্পন্ন করা যায়। 15 কিলােমিটার দূরত্বের মধ্যে WAN নেটওয়ার্ক কার্যকরী। 

ওয়্যারলেস কমিউনিকেশন সিস্টেমের সুবিধা : 
যেখানে ক্যাবলের মাধ্যমে সংযােগ প্রদান করা কঠিন সেখানে ওয়্যারলেস কমিউনিকেশন সিস্টেম বেশি সুবিধাজনক। জিপিএস এর মাধ্যমে গাড়ি, বিমান, জাহাজ বা ব্যবহারকারীর অবস্থান জানা যায়। 
যেকোনাে স্থান হতে চলমান অবস্থায় ইন্টারনেট অ্যাকসেস করা যায়। 
ভিন্ন ভিন্ন বিল্ডিং-এর জন্য এ ধরনের সিস্টেম স্থাপনে কোন অসুবিধা হয় না। 
এ ব্যবস্থায় ক্যাবলের ঝামেলা ও অতিরিক্ত খরচ থেকে রক্ষা পাওয়া যায় । একটি ডিভাইস অনেক ব্যবহারকারী একই সাথে শেয়ার করতে পারে। মিডিয়া নেটওয়ার্কের তুলনায় এ সিস্টেমে খরচ কম। 
নেটওয়ার্ক স্থাপনে ওয়ারলেস পদ্ধতি ঝামেলামুক্ত। 
এ ধরনের ব্যবস্থায় নয়েজ কম হয়। ওয়্যারলেস কমিউনিকেশন সিস্টেমের 

অসুবিধা: ওয়্যারলেস কমিউনিকেশন সিস্টেমে নেটওয়ার্ক বিপর্যয় হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে।
ডেটা চলাচলে বাধা পেলে নেটওয়ার্কের দক্ষতা কমে যায়। এ ধরনের নেটওয়ার্ক ব্যবস্থায় গতি কম থাকে। এ ব্যবস্থায় ত্রুটি নির্ণয় করা কঠিন। 

ওয়্যারলেস কমিউনিকেশনের প্রয়ােজনীয়তা (Importance of Wireless Communication): 

তথ্য ও যােগাযােগ প্রযুক্তির যুগে ওয়্যারলেস কমিউনিকেশনের প্রয়ােজনীয়তা অপরিসীম। 

নিচে ওয়্যারলেস কমিউনিকেশনের প্রয়ােজনীয়তা উল্লেখ করা হলাে : 
টেলিফোন কন্ট্রোল, ট্রাফিক কন্ট্রোল, ইনফ্রারেড ও আলট্রাসনিক রিমােট কন্ট্রোল ওয়্যারলেস কমিউনিকেশন সিস্টেমের মাধ্যমে করা হয়। পেশাগত LMR (Land Mobile Radio) ও SMR (Specialized Mobile Radio), সাধারণত ব্যবসায়, শিল্পে ,জনগণের প্রবেশের নিরাপত্তায় ওয়্যারলেস কমিউনিকেশন সিস্টেম ব্যবহৃত হয়। 
দ্রুত যােগাযােগের এলাকা যেমন যুদ্ধক্ষেত্রে দুর্যোগপূর্ণ স্থান, দুর্ঘটনা কবলিত এলাকা ইত্যাদি ক্ষেত্রে ওয়্যারলে কমিউনিকেশন সিস্টেমের প্রয়ােজনীয়তা সর্বাধিক। 

*যেসব দুর্গম স্থানে ক্যাবল যােগাযােগ সম্ভব নয়, সেখানে এ সিস্টেমের মাধ্যমে যােগাযােগ স্থাপন করা হয়। 
*মােবাইল ফোন বা স্মার্ট ফোন ওয়্যারলেস কমিউনিকেশন সিস্টেমের সবচেয়ে বড় প্রয়োগ ক্ষেত্র ওয়্যারলেস *কমিউনিকেশন সিস্টেম ব্যবহার করে GPS (Global Positioning System) এর সাহায্যে গাড়ির চালক, নৌকা ও *জাহাজের নাবিক, বিমানের পাইলটের গতি যেকোনাে স্থান থেকে জানা যায়। 
*কর্ডলেস, ওয়্যারলেস, ইউএসবি বা ব্লু-টুথ এর সাহায্যে মাউস, কীবাের্ড, প্রিন্টার প্রভুতি কম্পিউটারের সাথে যুক্ত করতে ওয়্যারলেস কমিউনিকেশন সিস্টেম আবশ্যক। 
*উড়ােজাহাজ বা সমুদ্রগামী জাহাজ চালনায় ওয়্যারলেস কমিউনিকেশন সিস্টেমের মাধ্যমে ভূ-পৃষ্ঠের সাথে যােগাযােগ রক্ষা করা হয়। 
*স্যাটেলাইটের মাধ্যমে টেলিভিশনে বিভিন্ন চ্যানেল দেখা ওয়্যারলেস কমিউনিকেশন সিস্টেমের উল্লেখযােগ্য উদাহরণ। 
*চলন্ত অবস্থায় কথা বলা, মেসেজ পাঠানাে, ইন্টারনেট অ্যাক্সেস ইত্যাদি ক্ষেত্রে ওয়্যারলেস কমিউনিকেশন সিস্টেম ব্যবহৃত হয়। 

এনএফসি (NFC) : রেডিও সিগন্যাল ব্যবহার করে খুব কাছাকাছি দূরত্বে (4 সেন্টিমিটার। থেকে 10 সেন্টিমিটার) দুটি ডিভাইসের মধ্যে তারবিহীন ডেটা যােগাযােগের এক সেট প্রােটোকলকে এনএফসি (NFC-Near Field Collutication) বলে। এ প্রােটোকল ব্যবহার করে সর্বোচ্চ 424 কিলােবিট/সেকেন্ড গতিতে ডেটা বিনিময় করা যায়। বর্তমানে মােবাইল ফোন, ক্রেডিট কার্ড, ডেবিট কার্ড, হেলথ কার্ড, বাস/ট্রেনের ভাড়া পরিশােধের কার্ড, টোল পরিশােধের কার্ড ইত্যাদিতে NFC প্রযুক্তি ব্যবহৃত হচ্ছে। প্রতিটি NFC ডিভাইস তিন ধরনের মােডে কাজ করে। 
যেমন— 
১. NFC কার্ড ইমুলেশন, 
২. NFC রিডার/রাইটার ও 
৩. NFC পিয়ার টু পিয়ার। 

জিগবি (Zigbee) : জিগবি হলাে একটি ওয়্যারলেস পার্সোনাল এরিয়া নেটওয়ার্ক তৈরি করার IEEE 802.15.4 ভিত্তিক আদর্শমানের প্রযুক্তি। পাওয়ার আউটপুট এবং পরিবেশগত বৈশিষ্ট্যের ওপর ভিত্তি করে এ প্রযুক্তির প্যানেল সীমা দৃষ্টিরেখায় 100m পর্যন্ত বিস্তৃত হতে পারে। জিগবি প্রযুক্তির সাহায্যে কম বিদ্যুৎ শক্তি ব্যবহার করে ডিজিটাল রেডিও ZigBee যােগাযােগের মাধ্যমে মেডিকেল ডেটা সংগ্রহ, ধুমপান ও আগুন। শনাক্তকরণ, বিল্ডিং অটোমেশন, রিমােট ওয়্যারলেস মাইক্রোফোন। কনফিগারেশন করা যায়। জিগবি নেটওয়ার্ক থেকে বিরতিহীনভাবে।
950 kbit/s ডেটা পাঠানাে যায়। এটি অন্যান্য বেতার বা ওয়্যারলেস পার্সোনাল এরিয়া নেটওয়ার্ক (WPAN) যেমন ব্লুটুথ বা ওয়াইফাই থেকে সহজ এবং কম ব্যয়বহুল। এ প্রযুক্তির মাধ্যমে 10 থেকে 100 মিটারের মধ্যে বিদ্যুৎশক্তি প্রেরণ করা যায়।
জিগবি ডিভাইস তিন ধরনের। যথা
১. জিগবি কোঅর্ডিনেটর (ZC),
২. জিগবি রাউটার (ZR) ও
৩. জিগবি এন্ড ডিভাইস (ZED)।

হটস্পট (hotspot) : পরস্পর সংযুইন্টারনেটে প্রবেশ বিন্দু বা এক্সেস। পয়েন্টগুলােকে হটস্পট বলে। একটি হটস্পট কয়েকটি কক্ষ নিয়ে হতে পারে বা কয়েক মাইল। বিস্তৃত হতে পারে। অর্থাৎ হটস্পট হলাে এক ধরনের ওয়্যারলেস নেটওয়ার্ক বা মােবাইল কম্পিউটার ও ডিভাইস (যেমন— স্মার্টফোন, ট্যাব, নােটবুক, পিডিএ, ল্যাপটপ) ইত্যাদিতে ইন্টারনেট সংযুক্ত করা। পাবলিক হটস্পট সাধারণত বিমানবন্দর, ট্রেন স্টেশন, পাম্প স্টেশন, হােটেল, হাসপাতাল, সুপার মার্কেট, লাইব্রেরি, কফি হাউস, ডিপার্টমেন্টাল স্টোর, এমনকি স্কুল-কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে দেখা যায়। বর্তমানে। তিনটি জনপ্রিয় হটস্পট প্রযুক্তি হলাে-
১. ব্লু-টুথ (Bluetooth), 
২. ওয়াই-ফাই (Wi-Fi) ও 
৩. ওয়াইম্যাক্স (Wi-MAX)।

জেনে রাখাে : আধুনিক ওয়্যারলেসের দক্ষতা অনেক বেশি। মােবাইল ফোন হলাে সবচেয়ে পরিচিত ওয়্যারলেস প্রযুক্তি। © ব্লুটুথ স্বয়ংক্রিয়ভাবে কনফিগার করতে পারে। রাউটারের সংখ্যা বৃদ্ধি করে Wi-Fi এর গতি বৃদ্ধি করা যায়।
ব্লু-টুথ (Bluetooth): স্বল্প দূরত্বে ডেটা আদান-প্রদানের জন্য ব্যবহৃত একটি ওপেন ওয়্যারলেস প্রােটোকলকে ব্লু-টুথ বলে। অর্থাৎ নিম্নশক্তিসম্পন্ন রেডিও (UHF-Ultra High Frequency) সঞ্চালনে ডেটা আদান-প্রদানে সক্ষম তারবিহীন স্বল্প দূরতে ব্যবহৃত একটি ওপেন ওয়্যারলেস প্রযুক্তিকে ব্লু-টুথ বলে। ব্লু-টুথ সমন্বিত যন্ত্রপাতি সুইচ অন করার সাথে সাথে একটি নির্দিষ্ট দূরত্বের মধ্যে স্বয়ংক্রিয়ভাবে একে অপরের সাথে যােগাযােগ ঘটাতে সক্ষম হয়। দশম শতাব্দীর ডেনমার্কের রাজা হারাল্ড ব্লু-টুথ-এর নামানুসারে এ প্রযুক্তির নামকরণ করা হয়।

ব্লু-টুথ প্রযুক্তির বিভিন্ন ধরনের ওয়্যারলেস ইন্টেল, এরিকসন ও থ্রীকম প্রস্তাবিত ব্লু-টুথ (Bt) হচ্ছে এমন একটি প্রটোকল যা নিম্নশক্তিসম্পন্ন রেডিও সঞ্চালনে ডেটা। পরিবহন করতে সক্ষম। দুই বা ততােধিক যন্ত্রের মধ্যে সংযােগ স্থাপনের লক্ষ্যে তারের ব্যবহার শুরু হয়েছে সুদীর্ঘকাল। থেকেই। কিন্তু কোনাে যন্ত্র যদি ভ্রাম্যমাণ ও বহনযােগ্য হয় সেক্ষেত্রে সমস্যা হয়ে দাড়ায়। এ সমস্যা থেকে সমাধানের জন্য তারবিহীন যােগাযােগ পদ্ধতির উদ্ভব ঘটে।
ব্লু-টুথ 2.4 GHz ফ্রিকোয়েন্সি ব্যান্ডে কাজ করে। এর 1.2 সংস্করণে ডেটার হার 1 Mbps এবং 2.0 সংস্করণে 3 Mbps। ব্লটুথ প্রযুক্তিতে কম ক্ষমতাবিশিষ্ট বেতার তরঙ্গের মাধ্যমে তথ্য পাঠানাে হয়। এ যােগাযােগ ব্যবস্থায় 2.45 GHe (প্রকৃতপক্ষে 2.402 থেকে 2.480 GHz-এর মধ্যে)-এর কম্পাঙ্ক ব্যবহৃত হয়। ব্লু-টুথের স্ট্যান্ডার্ড IEEE 802.15। 

শিল্প বিজ্ঞান এবং চিকিৎসা ক্ষেত্রে ব্যবহৃত যন্ত্রের জন্য উপরিউক্ত কম্পাঙ্কের সীমাটি নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে। ব্লু-টুথ কর্তক প্রেরিত সিগন্যালের ক্ষমতা থাকে মাত্র 1 মিলিওয়াট, যেখানে সেল ফোন 3 ওয়াট পর্যন্ত সিগন্যাল প্রেরণ করে।। অর্থাৎ ব্লু-টুথের নিম্ন ক্ষমতার সিগন্যাল উচ্চ ক্ষমতার সিগন্যালে কোনাে ব্যাঘাত সৃষ্টি করতে পারে না। ব্লু-টুথ একসাথে ৪টি যন্ত্রের মধ্যে যােগাযােগ স্থাপন করতে পারলেও প্রত্যেকটি যন্ত্রকে 10 মিটার ব্যাসার্ধের একই বৃত্তের মধ্যে অবস্থিত হতে হয়। কারণ ব্লু-টুথ প্রযুক্তি চারিদিকে সর্বোচ্চ 10 মিটার পর্যন্ত ক্রিয়াশীল থাকে। ব্লুটুথের ক্ষেত্রে ট্রান্সমিটার প্রতি সেকেন্ডে 1600 বার কম্পাঙ্ক পরিবর্তন করে। বু-টুথ প্রোটোকল বাস্তবায়নকারী যন্ত্রাংশ বা ডিভাইসগুলাে দ্বিমুখী সংযােগ টুথ US স্থাপন করে কাজ করে। ব্লু-টুথ প্রযুক্তির সাহায্যে যে মডেম নেটওয়ার্ক তৈরি করা হয় তার মৌলিক উপাদান হলাে, পিকোনেট (Piconet)। বর্তমানে কম্পিউটার, মােবাইল।
ফোন, গেমিং কনসােল, ডিজিটাল ক্যামেরা, প্রিন্টার, ল্যাপটপ, জিপিএস রিসিভার যন্ত্রে ব্লু-টুথ প্রযুক্তি ব্যবহার হচ্ছে। এ প্রযুক্তিতে বিদ্যুৎ খরচ কম হয়। বহুল ব্যবহৃত ব্লু-টুথ। ক্লাস 2 রেডিয়াস 2.5 মিলিওয়াট বিদ্যুৎ ব্যবহার করে। বেশি সময় ব্লু-টুথ চালু রাখলে দ্রুত চার্জ শেষ হয়ে যায়। এজন্য কাজ শেষে ব্লু-টুথ অফ করে রাখতে হয়। 

বু-টুথের বৈশিষ্ট্য :  
এটি IEEE 802.15.স্ট্যান্ডার্ডের ওয়্যারলেস পার্সোনাল এরিয়া নেটওয়ার্ক (WPAN)
পার্সোনাল এরিয়া নেটওয়ার্ক (PAN) স্বল্প দূরত্বে (১ – ১০ মিটারের) দুটি ডিভাইসের মধ্যে ডেটা স্থানান্তরে ব্লু-টুথ
রেডিও ওয়েভ ব্যবহার করে।
ডেটা ট্রান্সমিশন রেট ১ থেকে ২ এমবিপিএস। 
ব্লু-টুথ ২.৪ গিগাহার্টজ (GHz) ফ্রিকোয়েন্সিতে কাজ করে।
ব্লু-টুথ একটি পিকোনেট এর আওতায় সর্বোচ্চ ৮টি যন্ত্রের সাথে সিগন্যাল আদান-প্রদান করতে পারে। 
মােবাইল ফোন, ল্যাপটপ, কম্পিউটার, প্রিন্টার, ডিজিটাল ক্যামেরা এবং ভিডিও গেম কনসােলগুলােকে পরস্পরের
সাথে সংযুক্ত করতে এবং তথ্য বিনিময় করতে ব্লু-টুথ নিরাপদ উপায়ে তথ্য সরবরাহ করে থাকে। 
ব্লু-টুথ ব্যবহারকারীর মধ্যস্থতা ছাড়াই অটো কনফিগার করতে পারে। 

ব্লু-টুথের সুবিধা :  
এটি PAN এর ওয়্যারলেস ভিডিও নেটওয়ার্ক ব্যবস্থা (WPAN)। 
স্বল্প দূরত্বে ব্যবহৃত ওয়্যারলেস প্রােটোকল। এর বিদ্যুৎ খরচ খুবই কম। 
ফোন থেকে কম্পিউটারে ফাইল স্থানান্তরে এ প্রযুক্তি ব্যবহার হয়।
এটি সম্পূর্ণ স্বয়ংক্রিয় এবং ডিভাইস যুক্ত করার সাথে সাথেই কাজ করে। 
ডিভাইসগুলাের যােগাযােগ রেখায় কোনাে বাধা থাকলেও অসুবিধা হয় না। 
১ ব্লু-টুথ ব্যবহার করে কম্পিউটারের সাথে অন্যান্য ডিভাইসের সংযােগ ঘটানাে যায় এবং তথ্য আদান-প্রদান করা যায়। নেটওয়ার্কে ব্যবহারকারী নিয়ন্ত্রণ করার প্রয়ােজন হলে পাসওয়ার্ডও ব্যবহার করা যায়।

ব্লু-টুথের অসুবিধা :
র-টুথের ডেটা সিগন্যালের ক্ষমতা মাত্র 1 মিলিওয়াট।
এর ব্যান্ড উইথ তুলনামূলক কম।
ডেটা ট্রান্সফারে নিরাপত্তা ব্যবস্থা দুর্বল।

ব্লু-টুথের ব্যবহার :
ফোনের সাথে হ্যান্ডস ফ্রি হেডসেটের সংযােগ ঘটিয়ে ভয়েস ডেটা স্থানান্তরে ব্লু-টুথ ব্যবহৃত হয়।
মােবাইল ফোন থেকে কম্পিউটারে ফাইল স্থানান্তরে এ প্রযুক্তি ব্যবহার করা যায়। কম্পিউটারের সাথে অন্যান্য ডিভাইসের সংযােগ ঘটানাে যায় এবং তথ্য আদান-প্রদান করা যায়।
কম্পিউটারের ইনপুট ও আউটপুট ডিভাইসগুলাের সাথে তারবিহীন যােগাযােগে ব্লু-টুথ ব্যবহৃত হয়।।
জিপিএস রিসিভার, চিকিৎসা যন্ত্রপাতি, বারকোড স্ক্যানার ও ট্রাফিক কন্ট্রোল ডিভাইসগুলােতে ব্লু-টুথ ব্যবহৃত হয়।
ডেডিকেটেড টেলিহেলথ ডিভাইসগুলােতে হেলথ সেন্সর অল্প দৈর্ঘ্যে ডেটা পারাপারে ব্লু-টুথ ব্যবহৃত হয়।
যে স্থানে ইনফ্রারেড ব্যবহৃত হয় সেখানে নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে ব্লু-টুথ ব্যবহৃত হয়।

ওয়াই-ফাই (Wi-Fi):  তারবিহীন নেটওয়ার্কং প্রযুক্তি যা উচ্চ গতির ইন্টারনেট ও নেটওয়ার্ক সংযােগসমূহ সরবরাহের জন্য বেতার তরঙ্গকে ব্যবহার করে তাকে Wi-Fi বলে। বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতিগুলােকে তারবিহীন উপায়ে সংযুক্ত করার একটি কৌশল হলাে ওয়াইফাই (Wi-Fi)। এটি ওয়্যারলেস লােকাল এরিয়া নেটওয়ার্ক (WLAN) এর জন্য IEEE (Institute of Electrical & Electronics Engineers) 802.11 প্রণীত স্ট্যান্ডার্ড। Wi-Fi Free হচ্ছে LAN ভিত্তিক ওয়্যারলেস ব্যবস্থা। এ ব্যবস্থায় বহনযােগ্য কম্পিউটারের যন্ত্রপাতির। সাথে সহজে ইন্টারনেট যুক্ত করা যায়। একটি নির্দিষ্ট কভারেজ এলাকা বা হটস্পট (Hotspot) এর নেটওয়ার্ক সৃষ্টির জন্য ব্যবহৃত হয়। বিগত কয়েক বছরে Wi-Fi প্রচুর spot জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। বিভিন্ন ISP প্রতিষ্ঠান প্রথমে যােগাযােগ ব্যবস্থা বৃদ্ধির জন্য বিনামূল্যে wi-Fi সংযােগ দিলেও পরবর্তীতে মাসিক চাঁদার বিনিময়ে সার্ভিস দিয়ে আসছে। Wireless Fidelity দুটি শব্দ থেকে Wi-Fi এর উৎপত্তি। Wi-Fi একটি ওয়্যারলেস প্রযুক্তি যা সেলফোনের মতাে কাজ করে। পার্সোনাল কম্পিউটার, ভিডিও গেইম, স্মার্ট ফোন, ডিজিটাল অডিও প্লেয়ারে Wi-Fi এডাপ্টার থাকে তবে এটি অডিও প্লেয়ার ইন্টারনেটের সাথে Wi-Fi যুক্ত করা যায়।

ব্যবহার : একটি একক পয়েন্টে প্রায় ওয়াই-ফাই  20 মিটারের সীমানার মধ্যে ইনডাের Wi-Fi  সীমানার মধ্যে প্রবেশ করতে পারে।
ডাচ কম্পিউটার বিজ্ঞানী ভিক্টর ভিক হেরেস কে (Wi-Fi) এর জনক হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়। ডেফট ইউনিভার্সিটি অব টেকনােলজির সিনিয়র রিসার্চ ফেলাে হিসেবে।হিসেবে ব্যবহার করা যায় যেখানে কর্মরত অবস্থায় IEEE 802.11 স্ট্যান্ডার্ডের ওয়াই-ফাই আবিষ্কার Wi-Fi আউটডােরে অনেক বেশি করেন। তার লিখিত 'The Innovation Journey of 
বইটি তথ্য ও প্রযুক্তির আধুনিকায়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। । সাধারণত সকল ল্যাপটপ, স্মার্ট  ভিক্টর ভিক হেরেস (Wi-Fi এর জনক) । ফোন, পেরিফেরাল ডিভাইস, প্রিন্টার, এমপি থ্রী প্লেয়ার, ভিডিও গেইম কনসােল এবং ব্যক্তিগত কম্পিউটারে Wi-Fi ব্যবহার করা যায়। 

বিশ্বের যেকোনাে স্থান হতে যে কেউ wi-Fi ব্যবহার করতে পারে। বাসা ও অফিসের সাথে Wi-Fi বিভিন্ন হটস্পটে সাধারণ জনগণকে ইন্টারনেটে প্রবেশের সুবিধা দিতে পারে। এ ইন্টারনেটে প্রবেশ বিনামূল্যে হতে পারে বা কোনাে বাণিজ্যিক সুবিধার কারণে হতে পারে। ফ্রি Wi-Fi জোন : আজকাল অনেক স্কুল-কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, অফিস-আদালতে, বড়-বড় মার্কেটে ফ্রি Wi-Fi জোন স্থাপন করা হচ্ছে। ফলে শিক্ষক-কর্মচারী, শিক্ষার্থী থেকে শুরু করে সকল শ্রেণির লােকজন ইন্টারনেটের সুবিধা পাচ্ছে। ফ্রি Wi-Fi এর কারণে বিনামূল্যে ইন্টারনেটের ব্যবহার ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণে অগ্রণী ভূমিকা পালন করছে।

যদি আর্টিকেলটি ভালো লাগে, তাহলে সেটি বন্ধুদের সাথে শেয়ার করবেন।
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url