ষষ্ঠ শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের জন্য রচনা। টপিক গরু। গরুর রচনা। "cow" composition bangla

রচনা
ষষ্ঠ শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের জন্য রচনা। টপিক গরু। গরুর রচনা। "cow" composition bangla
ষষ্ঠ শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের জন্য রচনা। টপিক গরু। গরুর রচনা।

গরু


ভূমিকাঃ গৃহপালিত সকল প্রাণীর মধ্যে গরুই প্রধান। গরু মানুষের অত্যন্ত প্রয়ােজনীয় ও প্রিয়। সেই আদিম কাল থেকেই মানুষ তার প্রয়ােজনে গরু পালন করে আসছে। কালের বিবর্তনেও এই প্রাণীর গুরুত্ব কমেনি বরং বেড়েই চলেছে।

আকৃতিঃ গরু স্তন্যপায়ী, তৃণ ভােজী চার পা বিশিষ্ট গৃহপালিত জন্তু। গরুর উচ্চতা প্রায় তিন থেকে সাড়ে তিন হাত এবং লম্বায় প্রায় পাঁচ হাত পর্যন্ত হয়। গরুর দুইটি চোখ, দুইটি শিং, দুইটি কান ও একটি লম্বা লেজ আছে। লেজের প্রান্ত ভাগে এক গােছা চুল আছে যা দ্বারা গরু মশা-মাছি তাড়ায়। গরুর সমস্ত শরীর লােমে আবৃত। গরুর মুখ লম্বা। গরু শিং দ্বারা আত্মরক্ষা করে। গরুর পায়ের খুর দুই ভাগে বিভক্ত। এদের নিচের চোয়ালে। এক পাটি দাঁত আছে কিন্তু উপরের চোয়ালে দাঁত নেই। গরুর গলার নিচে নরম মাংসল চামড়া ঝুলে থাকে। একে গল কম্বল বলে।

স্বভাবঃ গরু অত্যন্ত শান্ত প্রাণী। ইহা সহজে পােষ মানে। তবে বলদ গরু অনেক সময় কিছুটা অশান্ত প্রকৃতির হয়ে থাকে। গাই গরু বা গাভী তার বাচ্চা রক্ষণাবেক্ষণে ব্যস্ত থাকে। গর হাবা-হা করে ডাকে।

প্রকারভেদঃ গরু সাদা, লাল, কাল, ছাই রং ও মিশ্র রংসহ বিভিন্ন রং এর হয়ে থাকে। গরু গৃহপালিত এবং বন্য এই দুই প্রকারের হয়ে থাকে। যে সমস্ত গরু পােষ মানানাে যায় না, বনে-জঙ্গলে, পাহাড়ে দেখা যায় তাকে বন্য গরু বলে। ঘরে পােষা গরুকে গৃহপালিত গরু বলা হয়।

খাদ্যঃ গরু ঘাস, খড়, লতা-পাতা, ভূষি, ভাতের মাড়, চাউলের কুড়া, খইল প্রভৃতি খেয়ে জীবন ধারণ করে। তবে ঘাস ও খড় এদের প্রধান খাদ্য। গরু প্রথমে সব খাবারই গিলে ফেলে, পরে বিশ্রামের সময় তা আবার মুখে এনে চিবায় এবং গিলে ফেলে। এমনি পুনরায় চিবিয়ে গিলে ফেলাকে জাবর কাটা বলে।

প্রাপ্তি স্থানঃ পৃথিবীর প্রায় সকল দেশেই গরু পাওয়া গেলেও সকল দেশের গরুর আকৃতি সমান নয়। ইংল্যাণ্ড, নিউজিল্যাণ্ড, ডেনমার্ক অষ্ট্রেলিয়া, আমেরিকা, রাশিয়া, মিশর, পাকিস্তান প্রভৃতি দেশের গরু আকৃতিতে বেশ বড় এবং শক্তিশালী। তবে আমাদের দেশে ছােট বড় সব রকম গরু দেখা যায়।

জীবন কালঃ গরু সাধারণত পনের থেকে বিশ বছর বাঁচে। গাভী গর দুই বা এক বছর অন্তর একটি করে। বাচ্চা দেয়। পাঁচ/ছয় বছরেই গরু পূর্ণতা লাভ করে।

উপকারিতাঃ গরু মানুষের অন্যতম উপকারী প্রাণী। বলদ গরু জমি চাষ করা গাড়ী টানা সহ অনেক প্রয়ােজনীয় কাজে লাগে। গাভী গরু দুধ দেয়। দুধ মানুষের জন্য অত্যন্ত পুষ্টিকর খাদ্য। গরুর দুধ থেকে দই, ঘি, মাখন, ছানা, পনির, ক্ষীর, পায়েস, পিঠা এবং নানা রকম মিষ্টি জাতীয় খাবার তৈরি হয়। গরুর মাংস মুসলিম এবং খৃস্টানদের প্রিয় খাদ্য। গরুর গােবর অন্যতম সার আবার উহা শুকিয়ে জ্বালানি হিসাবেও ব্যবহার করা হয়। গরুর চামড়া দিয়ে ব্যাগ, জুতা, বেল্ট ইত্যাদি তৈরি হয়। ইহা রপ্তানি করে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জিত হয়। গরুর হাড়, খুর, শিং দিয়ে চিরুনী, বােতাম, ছুরির বাট ও শিরিষ তৈরি হয়। সহজ কথা হলাে গরুর সব কিছুই আমাদের কাজে লাগে।

অপকারিতাঃ অসাবধানতার সাথে গর পালন করলে অনেক সময় গরু আমাদের ফসলের ক্ষতি সাধন করে। থাকে। আবার গরুর মল – মূত্র পরিবেশ দূষণে এবং মশা মাছির বংশ বৃদ্ধিতে যথেষ্ট সহায়তা করে।

উপসংহারঃ উপরােক্ত আলােচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায়, গরুর উপকারিতা মানুষের কাছে অপরিসীম। কিন্তু দুঃখের বিষয় এত উপকারিতা সত্ত্বেও আমরা গরুর প্রতি যত্নবান নই। আমাদের দেশে গরুর সংখ্যা দিন দিন কমে যাচ্ছে। আর তা ছাড়া উন্নত দেশগুলাের মত আমাদের দেশে গরু পালনের জন্য তেমন কোন সুন্দর ব্যবস্থা, প্রশিক্ষণ ও সুচিকিৎসার বন্দোবস্ত নেই। ফলে আমাদের দেশে গাে-সম্পদ ক্রমে বিলুপ্তির পথে এগিয়ে যাচ্ছে তাই গাে-সম্পদকে রক্ষার লক্ষ্যে সরকারী ও বেসরকারী ভাবে আমাদের সকলকে যত্মবান হতে হবে।

প্রিয় শিক্ষার্থী, লেখাটি ভালো লাগলে অবশ্যই তোমরা বন্ধুদের সাথে শেয়ার করবে।
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url